সেবা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের উপর শুল্ক ১৫% থেকে বাড়িয়ে ৩৭% করায় রপ্তানিবিষয়ক প্রধান খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্যের প্রতিযোগিতামূলকতা হ্রাস, রপ্তানি আয় কমা, কর্মসংস্থান সংকোচন এবং মুদ্রার রিজার্ভে চাপ তৈরি হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও উৎপাদন খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
![]() |
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি: সম্ভাব্য ঝুঁকি ও উত্তরণের পথ |
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশসহ প্রায় ১০০টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশি পণ্যের উপর শুল্ক ১৫% থেকে বেড়ে ৩৭% হওয়ায় রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, যা মোট রপ্তানির ৮৪% এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, তা সরাসরি প্রভাবিত হবে।
রপ্তানি আয় ও প্রতিযোগিতামূলকতা হ্রাস:
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে তা কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। ভিয়েতনাম, ভারত বা কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পণ্যের দাম বাড়লে মার্কিন ক্রেতারা বিকল্প বাজার বেছে নিতে পারেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই আয় ২০-৩০% কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্মসংস্থান ও সামাজিক প্রভাব:
তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন, যার ৬০%ই নারী। রপ্তানি কমলে কারখানাগুলো উৎপাদন সংকোচন বা বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে, যা বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করবে।
এর প্রভাবে নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা হ্রাস পেতে পারে।
আরও পড়ুন:
মুদ্রার রিজার্ভ ও বাণিজ্য ঘাটতি:
রপ্তানি আয় কমলে ডলার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হবে, যা ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক। টাকার অবমূল্যায়ন ত্বরান্বিত হতে পারে, ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে।
পাল্টা শুল্ক ও কূটনৈতিক চাপ:
বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানো সম্ভব নয়, তবে কূটনৈতিক আলোচনা বা আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করা যেতে পারে।
এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান বা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
উত্তরণের উপায়:
দীর্ঘমেয়াদে শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উচ্চমূল্যের পণ্য (যেমন টেকসই পোশাক, আইটি পণ্য) উৎপাদনে বিনিয়োগ জরুরি।
সরকারি পর্যায়ে রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি বা কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে। তবে, এই সংকটকে একটি সুযোগ হিসেবে নিয়ে উৎপাদন খাতের আধুনিকায়ন এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই রপ্তানি কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব।
এজন্য সরকার, শিল্প মালিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।