জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরের প্রবেশদ্বার দুধকুমার নদের ওপর ৬৫৫ মিটার সড়কসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার চুক্তি ছিলো।
![]() |
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতুর ওপর দিয়ে পাড়াপাড় |
২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারী পযর্ন্ত সেতুটির ৫৫ শতাংশ নির্মাণকাজ হয়েছে। ১৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করছে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। সেতুটি নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় এটির ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৬ কোটি টাকা। সেতুটির নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে আর কবে থেকে এটি ব্যবহার শুরু করা হবে এটা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
সড়কসেতুটির নির্মাণকাজ ধীরগতি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ও ট্রাকচালকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপুর্ণ রেলওয়ে বেইলি ব্রিজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ এই রেলসেতুর ওপর দিয়ে সোনাহাট স্থলবন্দরে ১৬০-১৭০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করে। প্রতিটি ট্রাকে ৩০-৩৫ টন পাথর পরিবহন করা হয়। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চর ভুরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই এবং নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের মানুষজনকে জেলা শহরের যোগাযোগের জন্য এই সেতুটি ব্যবহার করতে হয়।
আরও পড়ুন:
ট্রাকচালক তাজুল ইলাম (৫০)বলেন,’ পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঝুঁকিপুর্ণ রেলসেুর ওপর উঠলে প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেকোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে যেতে পারে।’ ‘সড়কসেতুটির নির্মাণকাজ ধীরগতি হওয়ায় বাধ্য হয়েই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু ব্যবহার করছি,’ তিনি বলেন।
স্থানীয় পথচারী আব্দুল কুদ্দুস চঞ্চল ও ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীর গাফিলতির কারনে সড়কসেতুর নির্মাণকাজ ধিরগতিতে চলছে। এই সেতুটির কারনে তারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন। ‘ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক রেলসেতুর ওপর দিয়ে আমাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে,’ তিনি বলেন।
সোনাহাট স্থলবন্দ সি এন্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকমল হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি থাকায় স্থলবন্দরে ঠিকঠাক ব্যবসা-বানিজ্য হচ্ছে না। অনেক ট্রাকচালক ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক চালাতে আগ্রহী হন না। এ কারনে বেশি ভাড়া দিযে ট্রাকভাড়া করতে হয়। ‘দুধকুমার নদের ওপর সড়কসেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে সোনাহাট স্থলবন্দরের ব্যবসা-বানিজ্য অনেক বেড়ে যাবে,’ তিনি বলেন। কিন্তু সেতুটি নির্মাণকাজে তেমন গতি দেখা যাচ্ছে না।
সোনাহাট স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্হতৃপক্ষের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি থাকায় এই স্থলবন্দরে আশানুরুপ ব্যবসা-বানিজ্য হচ্ছে না। সড়কসেতু চালু হলে এই স্থলবন্দর দিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য করতে আগ্রী হবেন।
কুড়িগ্রাম সড়ক ওজনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, এখন পযর্ন্ত ৫৫ শতাংশ নির্মানকাজ হয়েছে। আগামি বছর জুন মাস থেকে সেতুটি ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেভাবেই তাগিদা দেওয়া হচ্ছে। সেতুটির নকশা অনুমোদন কয়েকবার বাতিল হওয়ার কারনে ঠিকাদার দীর্ঘ দুই বছর কোন কাজ করতে পারেনি। এ কারনে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।
এদিকে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির প্রকল্প ম্যানেজার শামিম রেজা জানান, চলতি বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। সেতুর মুল অবকাঠামোর কাজ ৮০ শতাংশ হয়েছে। ২৩০০ মিটার সংযোগ সড়কের ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ”সময়মতো নকশার অনুমোদন পেলে সেতু নির্মাণে দেড়ি হতো না বলে জানান তিনি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।