নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা রাজিয়া খাতুনের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, নারীমুক্তি, গণতন্ত্র, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী রাজিয়া খাতুনের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা রাজিয়া খাতুনের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা রাজিয়া খাতুনের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


২০০৭ সালের এই দিনে (৫ই ফেব্রুয়ারি) ৯১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১০ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৪ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ইংরেজি ১৯১৭ সালের ২৪শে মে তদানীন্তন ময়মনসিংহ জেলার অধুনা জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার কাপাসহাটিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মাতা আছিরন বিবি ও পিতা নাসির উদ্দিন সরকার। 

তার পিতা নাসির উদ্দিন সরকার ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা। অবিভক্ত ভারতবর্ষের অল বেঙ্গল কংগ্রেস কমিটির সদস্য হিসেবে প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন তিনি। রাজিয়া খাতুনের মাতা আছিরন বিবি একজন আদর্শ গৃহিণী ছিলেন। স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পাশে থেকেছেন তিনি। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে রাজিয়া খাতুন নিজ গ্রামে কাপাসহাটিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তখন নারীশিক্ষা অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল। প্রগতিশীল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও ধর্মীয় গোড়ামী ও প্রতিকূল রক্ষণশীল সামাজিক পরিবেশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। পিতার ইচ্ছানুযায়ী গৃহে লেখাপড়া করে জ্ঞান সঞ্চয় করেন এবং পিতার অনুপ্রেরণা রাজনীতি ও সমাজসেবার দিকে গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তিনি। পিতার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তিনি সহায়তা করতে থাকেন। 

রাজিয়া খাতুন মাত্র ১২ বছর বয়সে কংগ্রেস পার্টির সদস্য হন। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে হন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য। সে সময়ে এত অল্প বয়সে আর কেউ এ রকম পদ লাভে সামর্থ হন নাই। কিছুকাল তিনি জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের যুগ্মসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় তিনি সুরেন্দ্র মোহন ঘোষের গুপ্ত বিপ্লবী দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৯ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। ১৯৩৪ সালে জামালপুরে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তিনি মেয়েদের চরকায় সূঁতা কাটা, খাদি কাপড় বুনন, হস্ত শিল্প ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য শিক্ষা দিতেন। এই আশ্রমে খাদি কাপড় বোনা,  শিক্ষা ও পাঠাগার, স্বাবলম্বন, হস্তশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা বিবিধ কার্যক্রম পরিচালনা  করা হতো। পাকিস্তানি শাসকদের দমন নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশে গান্ধী আশ্রমের কার্যক্রম এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ২রা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে জাতিসংঘ আহুত আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হয় মানব কল্যাণের জামালপুরের এই গান্ধী আশ্রমের কার্যক্রম।

রাজিয়া খাতুন মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থ সংগ্রহ করে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন, অনেককে আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি বিয়ে করেননি। তার মা’র খুব শখ ছিল তাকে বিয়ে দেবেন। বাবার অনুপ্রেরণায় রাজিয়া খাতুনের ভিতরে দেশাত্ববোধ ও বিপ্লবী চেতনা আমৃত্যু জাগরূক ছিল। তাঁর আজীবন সংগ্রামী  সহোদর ভাই মোয়াজ্জেম হোসেনও তাদেরই পথ অনুসরণ করেছেন আমৃত্যু। তিনি ন্যাপ, ঐক্য ন্যাপ এবং গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরূপে স্বদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রী পার্টির জামালপুর জেলা কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক এবং জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি। 

রাজিয়া খাতুন তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি ময়মনসিংহ শহরে চলে আসেন। এখানে এসে প্রথম দিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)- এ যোগদান করে কাজ করতে থাকেন তিনি। কমরেড মনি সিংহ, মন্মথনাথ দে, জ্যোতি বসু, অজয় রায়, প্রমূখ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদের সংস্পর্শে এসে ১৯৭৮ সালে রাজিয়া খাতুন কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। রাজিয়া খাতুনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ময়মনসিংহে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বেশ কিছুকাল ময়মনসিংহ জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। 

আলোকিত এই সংগ্রামী নারীর স্মৃতি, জীবন ও কর্ম আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে—এ আমাদের কামনা। তাঁর প্রতি আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক





সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top