উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: পুলিশ হেফাজতে আসামী নির্যাতন ও গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার সাবেক দুই ওসি সহ ১৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে আসামী নির্যাতনসহ গুলি : উল্লাপাড়া-সলঙ্গার সাবেক দু' ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা |
পাবনার ফরিদপুরের নেছরাপাড়ার বাসিন্দা ট্রাক চালক রোকন মোল্লাকে নির্যাতনের অভিযোগে উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সাবেক এসআই আব্দুস সালাম, পার্শ্ববর্তী সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সাবেক ইনেসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক এসআই মনসুর রহমান, এএসআই আব্দুল কুদ্দুস সহ মামলার আসামি হিসেবে অজ্ঞাত আরো ১০ পুলিশ কনস্টেবল রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতে ট্রাক চালক রোকন নিজেই বাদি হয়ে মামলাটি করেন। রোকন পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছড়াপাড়া (শিববাড়ী) এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ মে ট্রাক চালক রোকন বগুড়া থেকে পাবনা যাচ্ছিলেন। ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে রাত্রিকালীন ডিউটিরত পুলিশের পিক-আপ ভ্যানের সাথে তার গাড়ী ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ড্রাইভার রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করে। ট্রাক চালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক ওই ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়। পরে রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের সলঙ্গার হরিণচড়ায় ট্রাক চালক রোকনকে ধরে মারধর করে। বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে পুকুর থেকে তুলে অভিযুক্ত আসামী সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি
আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলামকে ট্রাক ড্রাইভার রোকন মোল্লাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকী দেন। পরে ইন্সপেক্টর আসিফ তার ডান পায়ে গুলি করেন। এরপর সলঙ্গা থানায় নিয়ে ৩ টি মামলা করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ট্রাক চালক রোকন মোল্লা কিছুটা সুস্থ হলেও তার ডান পা কেটে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদি রোকন মোল্লা বলেন, উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম পিস্তল দিয়ে তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। তার একটি পা নেই। তিনি দাবি করেন দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেরি হয়েছে।জামিনে বেরিয়ে এসে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে বাদীর মামলা দাখিলকারী আইনজীবী গোলাম হাফিজ কিরন ইসলাম জানান, বাদী পক্ষের মেডিকেল রিপোর্ট এসেছে। সলংঙ্গা থানা আমলি আদালত মামলা দায়েরের পর বিজ্ঞ বিচারক আমলে নিয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে মামলাটি রুজু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম (বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত) বলেন, " মামলার বিষয়টি শুনেছি। বাদী নিজেই একজন আন্ত:জেলা ডাকাত দলের দলনেতা। তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয় জেলায় কমপক্ষে ২৮ টি মামলা রয়েছে। ঐদিন ডাকাতের ঘটনায় তাকে ধরতে পায়ে গুলি করা হয়।"
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন বুধবার সকালে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, " আদালত বরাবর রোকন মোল্লার এজাহার জমা প্রদানের বিষয়টি অবগত হয়েছি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।