জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: বিবিসি ২০২৪ সালের বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো এবং প্রভাবশালী ১০০জন নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বর এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নারী প্রতিনিধি দেশের উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলার রিকতা আখতার বানু লুৎফা। তিনি পেশায় নার্স এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১০০জন নারীকে তালিকায় বেছে নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান,স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু। বিবিসির এই তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এমন সমস্ত নারীকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা তাদের কঠিন পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন।
রিকতা আখতার বানু সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, তিনি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন। সেখানে প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। রিকতা আখতার বানুর মেয়ে অটিস্টিক। মেয়েটি সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। রিকতা আখতার বানু তার এই মেয়েকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনি তার জমি বিক্রি করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
রিকতা আখতার বানুর লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি স্কুলে এখন প্রায় ৩শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটি প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন স্কুলটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশু শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করেন নার্স রিকতা আখতার বানু লুৎফা। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকায় চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকে জ্যেষ্ঠ নার্স তিনি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনঞ্জয় গ্রামে মৃত নুর মোহাম্মদের কন্যা। তার স্বামীর বাড়ি চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের রমনা সরকার পাড়া গ্রামে। বর্তমানে স্বামী আবু তারিক আলমসহ এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
বিবিসি ১০০ নারী উপরোক্ত পরিস্থিতির নারীদের উপরে সৃষ্টি হওয়া প্রভাবকে স্বীকৃতি দিয়ে এই বছর তাদের উদযাপন করছে যারা বদলে যাওয়া বিশ্বে তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন।এছাড়া এই তালিকা জলবায়ুু সংকটের প্রভাব পর্যবেক্ষণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তাই জলবায়ু বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের উদযাপন করছে যারা তাদের সমাজকে এর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করছেন রিকতা আখতার বানু লুৎফা।
জানাযায়, ২০০৯ সালে রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হলেও এমপিও ভুক্ত হয় ২০২০ সালে। স্কুলটিতে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১০ জনের বেতন-ভাতা হলেও বাকীরা এখনও আসতে পারেননি বেতন-ভাতার আওতায়।
তার নিজের নামে গড়া প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন মেয়ে তানভীন দৃষ্টি মনিকে। প্রায় ১৫ বছর আগে গড়ে তোলা তার স্কুলে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০০জন। আর শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২১ জন। রিকতা আখতার বানু এখনও চাকরী থেকে অবসর না নিলেও বাকী জীবন কাটাতে চান তার বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বলেন, এই বিদ্যালয়টি কেন প্রতিষ্ঠা করলাম তার পেছনে অনেক কষ্ট আছে। আমার মেয়েকে যখন প্রাথমিক স্কুলে দেই তারা আমার মেয়েকে বের করে দিয়েছিল। প্রতিবন্ধী বলে তাকে গালিগালাজও করেছে। তারপর আর তাকে কোথাও ভর্তি করাতে পারি নাই। সেই থেকে বুকের ভিতর অনেক যন্ত্রণা হতো। সেই যন্ত্রণা থেকে আজ আমার এই প্রতিষ্ঠান। আমার মেয়ের কারণে বিশ্বে নারীর তালিকায় আমাকে স্থান দিয়ে সম্মানিত করেছে। আমি আপ্লুত। এই কৃতিত্ব আমার একার নয়। বিবিসি পরিবার এবং আমার জেলার সংবাদকর্মীসহ আমার কাজে উৎসাহ দেয়া সকলের।
বিদ্যালয়ের প্রধাম শিক্ষক শাহিন শাহ বলেন, আমরা শিক্ষক- কর্মচারীসহ পুরো চিলমারী বাসি আনন্দিত। তার উন্নতি ও সাফল্য কামনা করছি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।