শফিকুল ইসলাম: কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় শাকসবজির চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক কৃষক। এবারে কয়েক দফা বন্যা ও ঘনঘন বৃষ্টির কারনে শাকসবজির চাষাবাদে বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে।
সময় মতো সবজি উৎপাদন করতে না পারায় কাঙ্খিত মুল্য থেকে বঞ্জিত হয় কৃষকগণ। তবে ঘুড়িয়ে দাড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই কৃষক। আবারো শুরু করেন শাকসবজির চাষ।
রৌমারী উপজেলায় শাকসবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আফতারুল ইসলাম নামের এক কৃষক। অভাব-অনটনের সংসারে হাল ধরতে যখন কিছু একটা অবলম্বন খুঁজছিলেন তখনই প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে সবজি চাষে মনোযোগী হন আফতারুল। বর্তমানে তাঁর সংসারে অভাব-অনটন নেই বললেই চলে। আফতারুল ইসলাম উপজেলার খাটিয়ামারী গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। পরিবারে সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
আফতারুল ইসলাম এর বসতবাড়ি ছাড়া কয়েক শতক ফসলি জমিতে সে গত বছর শাকসবজির চাষ করেন। ওই সময়ে বাজারদর চড়া থাকায় অনেক লাভবান হয়েছেন তিনি। ওই অর্থ দিয়ে কিছু জমিও ক্রয় করেন তিনি। এবার নিজস্ব জমি ছাড়াও ৩৩ শতক জমি বর্গা নেন। বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জমি চাষ শুরু করেন। ওই জমিতে ঢেড়স, বেগুন, লাউ ও বটবটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজির চাষ করেন তিনি। ইতিমধ্যে জমি থেকে ঢেড়স তুলে বাজারে বিক্রি করছেন কয়েকদিন থেকে। দামও পাচ্ছেন অনেক। বটবটি পাইকারি ভাবে বিক্রি করছেন প্রতিমন প্রায় ২ হাজার টাকা। ভালো দাম পেয়ে অনেক খুশি আফতারুল ইসলাম। তার দাবী সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আগামী বছর কয়েক বিঘা জমিতে এই সবজির চাষ করবে।
অপর দিকে রাজিবপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারা জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদানে তেমন কোন লাভ না হওয়ায় বেচে নিয়েছে শীতকালীন শাকসবজির চাষ। এতে চাষিরা তাদের সংসারের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ করেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা দেছে, কৃষকরা তাদের জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। বর্তমানে শাকসবজির দাম বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। মিশ্র ফসল হিসেবে বেগুন, মূলা, লাল শাক ও মরিচসহ বিভিন্ন প্রজাতের চারা রোপন করা হয়।
মরিচাকান্দি গ্রামে সবজিচাষি মো. ফরজ আলী জানান, তিনি প্রতিবছর ২ একর জমিতে মিশ্র শাকসবজির চাষ করেন। পরিবারের সবাই মিলে জমিতে কাজ করেন। এবার তিনি মুলা বিক্রি করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় করেছেন। মরিচ, বেগুন ও ঢেড়স ও লাউ সহ অন্যান্য শাকসবজি বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এই জমির উৎপাদিত শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করনে। তিন একর জমিতে শাকসবজি উৎপাদনে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। এছাড়াও সংসারের সকল খরচ বহন করেও প্রতিবছর আয় করেন প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা।
কৃষক মাইদুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের মূলা বেগুন চাষ করে এখান থেকে আড়াই লাখ টাকার সবজী বিক্রি করেছি। তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শাকসবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এবার বন্যায় আগাম শাকসবজি সব নষ্ট হয়ে গেছে। এউপজেলায় মোট ৭৩ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে সরকার কর্তৃক কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৫’শ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে। প্রথম দিকে বৃষ্টির কারনে কিছু ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে আবহাওয়া ভালো থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে পাশাপাশি দামও বেশি পাচ্ছে। কৃষকদের ফসল সব সময়ই তদারকি করা হচ্ছে এবং কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।