পিনাক রঞ্জনের দাবি: সেনাবাহিনী গুলি না করায় হাসিনার পতন

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর মতে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের দমন করতে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়, যা সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পিনাক রঞ্জনের দাবি সেনাবাহিনী গুলি না করায় হাসিনার পতন


হাসিনার পতন নিয়ে পিনাক রঞ্জনের বক্তব্য: সেনাবাহিনী গুলি করতে অস্বীকৃতি জানায়

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক বিশেষ সচিব এবং ঢাকায় সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, শেখ হাসিনা তার সরকারের পতন সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাস পাননি। তিনি মন্তব্য করেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে হয়তো প্রধানমন্ত্রী মনে করেছিলেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পিনাক রঞ্জন তুলে ধরেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিভিন্ন দিক। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন গণমাধ্যমটির কূটনীতি বিষয়ক সম্পাদক শুভজিৎ রায়। পিনাক বলেন, “আমরা জানতাম যে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা কি এরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন? আমার মনে হয়, তিনি এমনটা অনুমান করেননি।”

প্রেক্ষাপট: ১/১১ এবং পরবর্তী প্রভাব

পিনাক রঞ্জন ২০০৭-০৯ সময়ে ঢাকায় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যখন বাংলাদেশে ১/১১-এর সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। তার মতে, ওই সময়কার ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়াই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারে। এর আগে ১৯৯৯-২০০২ সালেও তিনি ঢাকায় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পিনাক দাবি করেন, সম্প্রতি বিক্ষোভকারীরা যখন ৯ দফা দাবি নিয়ে ফিরে আসে, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। “৩০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারানোর পরও প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে রাজি হননি। মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য ও পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিও অগ্রাহ্য করা হয়। এতে বিক্ষোভকারীরা আরও শক্তিশালী হয়, কারণ তাদের পেছনে কার্যকর একটি শক্তি ছিল,” বলেন পিনাক।

সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং সরকার পতন

পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী আরও বলেন, সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “তারা বিক্ষোভকারীদের দমনে গুলি চালাতে রাজি হয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠায় যে, আমরা বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করব না। এই অবস্থানই হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই পরিস্থিতির পেছনে অনেকগুলো প্রভাব কাজ করেছে—যার মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি এবং কিছু অভ্যন্তরীণ শক্তি সক্রিয় ছিল। ঢাকার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও পিনাকের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, যা তাকে এই জটিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণে সহায়তা করেছে।


বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া: পিনাক রঞ্জনের দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়

ভারতের সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর সাম্প্রতিক মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরা। তাঁরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের বিষয়ে পিনাকের বক্তব্য বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণেও এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

পিনাক রঞ্জনের বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষণের চেয়ে কল্পনা নির্ভর মনে হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় সংবিধান মেনে কাজ করে এবং সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে কখনো কোনো সরকার পতনের ভূমিকা থাকে না।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "এ ধরনের অভিযোগ দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে এবং গুজবকে উসকে দেয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটগুলো কখনোই একক কোনো বাহিনীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল নয়। সেনাবাহিনীর অবস্থান বরাবরই সংবিধান রক্ষার পক্ষে। পিনাকের এই মন্তব্য স্পষ্টতই অপ্রমাণিত ও ভিত্তিহীন।

সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক ঘটনার নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করে না। বিক্ষোভ দমন বা শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সবসময় সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। পিনাকের বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেই মনে করি, যা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।

পিনাক রঞ্জনের মতো একজন প্রাক্তন কূটনীতিকের কাছ থেকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আসা দুঃখজনক। বাংলাদেশ এখন একটি গণতান্ত্রিক এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র। সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো সংস্থা দেশের নির্বাচিত সরকারকে চাপের মুখে ফেলার বিষয়ে জড়িত নয়।

বিশিষ্টজনরা সর্বসম্মতভাবে বলেন, পিনাকের বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁরা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি বিশ্লেষকদের মন্তব্যে আরও সংবেদনশীলতা ও যথার্থতা থাকা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top