সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি আন্দোলন মাত্র ৩৬ দিনে এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বা মূল পরিকল্পনাকারী কে বা কারা ছিলেন।
নিউইয়র্কে ছাত্র নেতাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর এই বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।
জুলাই মাসে কোটা সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর থেকে বিএনপি, জামায়াত, এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করছে। বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাদের চার শতাধিক কর্মী এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন এবং সারাদেশের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের সমর্থন দিয়ে সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিভিন্ন দিক থেকে কৃতিত্ব দাবি
বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা মামুন খান বলেন, "এই আন্দোলন সফল করার পেছনে সব শ্রেণির মানুষের অবদান ছিল। এককভাবে কাউকে মাস্টারমাইন্ড বলা ঠিক নয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আন্দোলনে সহায়তা করেছেন। তাই, সকলের যৌথ অবদান ছিল এখানে।"
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শিবিরের নেতারাও আন্দোলনের সাফল্যে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের আত্মপ্রকাশ এবং ছাত্র সংগঠনের অবদানের বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জামায়াতের ছাত্রনেতা আবু সাদিক বলেন, "শুরুর থেকেই আমরা আন্দোলনের সাথে ছিলাম। তবে সবার অবদান সম্মিলিতভাবেই এই সফলতা এনে দিয়েছে।"
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য ভূমিকা
এই আন্দোলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কাওসার হাবিব বলেন, "প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে আন্দোলনের ধারাকে ত্বরান্বিত করেছে। তাদের অবদানের ফলে স্বৈরাচারের পতন আরও দ্রুত ঘটেছে।"
ইউল্যাবের শিক্ষার্থী শ্যামলি সুলতানা বলেন, "এ আন্দোলনে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষও অবদান রেখেছে। তাদের সাহস ও রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়েই আন্দোলনটি গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে।"
মাস্টারমাইন্ড বিতর্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, "এই আন্দোলন পরিকল্পিত ছিল না, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই সরকার পতন হয়েছে। এককভাবে কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল না।"
সমন্বয়করা উল্লেখ করেন, আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য সরকার পতন ছিল না। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের কারণে জনগণের ক্ষোভ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, এই আন্দোলন স্বাভাবিকভাবেই একদফার সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এককভাবে মাস্টারমাইন্ড খুঁজে বের করা কঠিন। কারণ, এটি ছিল জনগণের যৌথ প্রতিরোধের ফলাফল।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।