জামালপুরে প্রধান শিক্ষকের ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

মাসুদুর রহমান:  জামালপুর সদর উপজেলার  শ্রীরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আওয়াল খান ও সাবেক সভাপতি আলম মিয়ার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ,শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ করা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

জামালপুরে প্রধান শিক্ষকের ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ


অভিযোগের ১ মাস পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা ।  তদন্ত স্বাপেক্ষে তাকে অপসারণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা  ।   

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে,  ১৯২৭ সালে সদর উপজেলার ২ নং শরীফপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রীরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের পর থেকে রবিউল আওয়াল খান ও শরিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান  এবং বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি  রফিকুল ইসলাম আলমের  সাথে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।  বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের  টিন, এঙ্গেল, ইট, দরজা- জানালা এবং  পুরাতন মসজিদের ইট,টিন,কাঠ  বিক্রি, দীর্ঘদিন যাবৎ  পুকুর লিজ  বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও তারা কতৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে পুরাতন জরাজীর্ণ  বিজ্ঞান  ভবনের উপরে দ্ধিতল ভবন নির্মাণ করে।  এ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ এর চিত্র তুলে ধরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীরা জামালপুর জেলা প্রশাসক এবং ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে এলাকার ছাত্র জনতারা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে  জামালপুর জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অনুলিপি প্রদান করেন। অভিযোগের   দীর্ঘ ১ মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারনে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা৷ 

অভিযোগ রয়েছে,  কিছুদিন পূর্বে  বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের লোহার জানালা-দরজা ও গ্রীল চুরি হওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক রবিউল আওয়াল খান চোরকে হাতেনাতে ধরলেও  চোরের পক্ষের লোকজন নিয়ে  ও  সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আলমের সহযোগিতায় চোরের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয় ।   বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক প্রাক্তন ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় এলাকায় জানাজানি হলে ছাত্রীর অভিভাবক ও গণ্যমানব্যক্তি  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট মৌখিক অভিযোগ দিলেও তার সহকারী শিক্ষকের নিকট থেকে মোটা অংকের  উৎকোচ গ্রহণ করে ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়েছেন। সেই শিক্ষক এখনো বহালতবিয়তে আছেন বলে জানা যায় । 

খোজ নিয়ে জানা যায়, রবিউল আওয়াল খান  বিদ্যালয়ে যোগদানের সময় তৎকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন আলতার হোসেন।  অযোগ্য প্রধান শিক্ষক রবিউল আওয়াল খানের যোগদানের  বিরোধীতা করায়  ম্যানেজিং কমিটির মিটিং এ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেন অনুপস্থিত থাকলে পুরাতন রেজুলেশন খাতা না পেয়ে নতুন খাতায়  রবিউল আওয়াল খানের নিয়োগের  রেজুলেশন করা হয় । প্রধান শিক্ষক  হিসেবে রবিউল আওয়াল খান বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে  দাড় করে নিজের আধিপত্য ও আখের গোছানোর মত কাজ করছেন । বিগত সরকারের আমলে  বিদ্যালয়ে যতগুলো শিক্ষক    নিয়োগ  দেয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক রবিউল আওয়াল খান  লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। বিগত সরকার পতনের অনেক আগে থেকেই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও  শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ।

এদিকে স্থানীয় সোলায়মান জানান,  বিদ্যালয়েের নৈশপ্রহরী - ছানোয়ার হোসেন এর সহযোগিতায় এলাকা  কতিপয়  খারাপ যুবকরা রাতে পতিতা নিয়ে বিদ্যালয়ে আনন্দ ফুর্তি করে। এ ঘটনা প্রধানশিক্ষক জানতে পারলেও  লেখা পর্যন্ত কোন প্রকার আইনী ব্যবস্থা নেয়নি নৈশপ্রহরী ও যুবকদের  বিরুদ্ধে।

এদিকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাইম আলমগীর জানান,  প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের জন্য  ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার দিন দিন কমে যাওয়া, প্রায় সময় প্রধান শিক্ষকের  অনুপস্থিত থাকায় বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব পরিচালনায় অনিয়ম, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের দাতাসদস্যদের পরিবারের কাউকে সদস্য না করে নিজের মনগড়া লোকজন নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন প্রধান শিক্ষক । 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান,  স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের জন্য  শিক্ষকগণ মনোক্ষুণ্ণ  এবং সকল সুবিধা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বঞ্চিত।  অবৈধ কাজে সম্মতি না দিলে খারাপ আচরণসহ নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। এর জন্য একজন  শিক্ষক  চাকরি বাদ দিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।  শিক্ষক-কর্মচারীদের অজান্তে বিদ্যালয়ের বিগত বছর গুলোতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবশালীদের  নিয়ে তার অপকর্ম ঢাকতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি  করেছেন । এসব কারণে তাকে নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক ও কর্মচারীসহ এলাকার শিক্ষানুরাগী, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের  মাঝে তীব্র ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। শরিফ পুর ইউনিয়ন আওয়ামী  লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২ং শরিফ পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম  প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের  নেতা ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি  হওয়ায় তার  ভয়ে এলাকার লোক জন মুখ খুলতে পারিনি। প্রধান শিক্ষক  রবিউল আওয়াল খান চাকরি বহাল রাখতে অনিয়ম দূর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে গঠন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আলম কে চার বার  সভাপতি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকও কয়েক দিন আত্মগোপনে ছিলেন।  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলেও  রবিউল আওয়াল খানের প্রভাব বন্ধ হয়নি। প্রধান শিক্ষক  পদটি আঁকড়ে ধরে রাখতে তিনি স্থানীয় ভিলেজ পলিটিক্সসহ বহিরাগতদের সহায়তায় সহায়তায়  প্রধান শিক্ষকের পদটি আঁকড়ে ধরে রাখার আছেন।  

এলাকার শিক্ষার্থীরা জানান, এলাকার শিক্ষানুরাগী, ছাত্র জনতা রবিউল আওয়াল খানকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে  বয়কট করেছন। 

উল্লেখ্য যে,  ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয় নিয়োগ বানিজ্য ও দূর্নীতির অভিযোগে এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত  অভিযোগ দায়ের করেছিলেন যাহার স্মরক নং ৬২১৯,তাং ১৮/০৯/২০১১ইং কিন্ত সে সময়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সভাপতির এক আত্মীয় সেই সময়ে মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করে অভিযোগটি এখন ও ফাইলে চাপা পড়ে   আছে। আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর জামালপুর জেলা প্রশাসক এবং ২৯ তারিখ শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।  জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক  রবিউল আওয়াল খানের বিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছচারিতা নিয়োগবাণিজ্যের তদন্ত সাপেক্ষে তাকে অপসারণ না করা হলে  ছাত্র জনতা কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করবেন বলে জানা যায়।


এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আওয়াল খান জানান,  আমার কোন বক্তব্য নাই৷  যে যা পারে লেখুক গা৷  


শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আলম আলীকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  


এ বিষয়ে জামালপুর সদর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, কোন অনুলিপি বা অভিযোগ পায়নি।  


এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিন্নাত শহীদ পিংকি জানান,  চেক করে জানাতে হবে৷  


এদিকে জামালপুর জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে মুঠোফোনে জানান,  বিষয়টি নিয়ে কোন অভিযোগ বা অনুলিপি আমার দপ্তরে দিয়েছে কি না জানি না ৷  আর আমার অফিসের কারো নলেজে নেই ৷  খোজ খবর নিচ্ছি৷ অভিযোগ দিয়ে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top