সেবা ডেস্ক: কবর জিয়ারত সুন্নত, যা মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করায়। তবে শুক্রবারে কবর জিয়ারতের বিশেষ ফজিলতের কোনো সহিহ হাদিস নেই।
কবর জিয়ারত: ইসলামের দৃষ্টিতে বিধান, ফজিলত ও প্রচলিত ভুল ধারণা |
কবর জিয়ারত: ইসলামের দৃষ্টিতে বিধান, ফজিলত ও প্রচলিত ভুল ধারণা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) আমাদেরকে কবর জিয়ারতের জন্য উৎসাহিত করেছেন। কবর জিয়ারত শুধুমাত্র একটি ইবাদত নয়, এটি মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে হৃদয় বিগলিত হয়, চোখে অশ্রু আসে, এবং অন্যায় থেকে তওবা করার অনুপ্রেরণা জাগে। এমনকি এটি নেকির প্রতি আগ্রহ ও পরকালীন মুক্তির চিন্তা জাগিয়ে তোলে।
কবর জিয়ারতের অনুমতি ও উদ্দেশ্য
প্রথম দিকে ইসলামের সূচনালগ্নে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাসূল (সা.) অনুমতি প্রদান করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, বুরাইদা আসলামি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন:
"আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন আমাকে আমার মায়ের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরাও তোমাদের মৃতদের কবর জিয়ারত করো। কারণ, এটি আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৭১)
শুক্রবারে কবর জিয়ারতের প্রচলিত ধারণা
শুক্রবারে কবর জিয়ারত নিয়ে অনেকের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, এ দিনে কবর জিয়ারত করা বেশি সওয়াবের কাজ। যদিও কবর জিয়ারত যে কোনো দিন এবং যে কোনো সময় করা যায়, তবে নির্দিষ্ট দিনে কবর জিয়ারতের জন্য অতিরিক্ত ফজিলতের বিষয়ে কোনো সহিহ হাদিস নেই।
একটি প্রচলিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
"যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তাকে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।" (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস: ৬১১৪)
হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে মতামত
এই হাদিসের সনদ নিয়ে স্কলাররা সন্দেহ পোষণ করেছেন। হাদিসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে উল্লেখিত ইবনু নু’মান এবং ইয়াহইয়া ইবনুল আলা আল-বাজালী সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তারা অবিশ্বস্ত এবং মিথ্যাবাদী। ইমাম আহমাদ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস এই বর্ণনাকারীদের জালিয়াত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ফলে স্কলাররা একমত যে এই হাদিসটি জাল ও অবিশ্বাস্য। (তাবারানি, আল-আউসাত : ৬/১৭৫; বায়হাকি, শুআবুল ঈমান : ৬/২০১; সুয়ুতি, আল-লাআলি : ২/৪৪০)
কবর জিয়ারতের করণীয় ও ইসলামের নির্দেশনা
১. কবর জিয়ারতের দিন ও সময়
কবর জিয়ারত যে কোনো দিন করা যায়। শুক্রবারকে নির্দিষ্ট করা বা এ দিনকে বিশেষ সওয়াবের জন্য বেছে নেওয়া শরিয়তসম্মত নয়।
২. আখিরাতের কথা স্মরণ
কবর জিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক কাজের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
৩. দোয়া ও তাওবা
কবর জিয়ারতের সময় মৃতদের জন্য দোয়া করা এবং নিজের জন্য তাওবা ও প্রার্থনা করা সুন্নত।
কবর জিয়ারত একটি সুন্নত ইবাদত, যা আখিরাতের কথা স্মরণ করায়। এটি যে কোনো দিন করা যায়, তবে শুক্রবারে কবর জিয়ারতের জন্য কোনো বিশেষ ফজিলত বা সওয়াবের প্রমাণ সহিহ হাদিসে নেই। তাই এমন ধারণায় প্রভাবিত না হয়ে সঠিকভাবে কবর জিয়ারত করার চেষ্টা করা উচিত।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।