সেবা ডেস্ক: ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দফা সংলাপ করেছেন। আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দফা সংলাপ করেছেন। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার, আগামী নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক সমস্যা নিয়েও মতবিনিময় হয়েছে।
আলোচনার প্রেক্ষাপট
৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি একাধিক দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন। এবারকার সংলাপে গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি এবং বিজেপি-সহ আরও কয়েকটি দলের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়গুলো
১. গণফোরামের প্রস্তাব
গণফোরামের সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান জানান, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এসব প্রস্তাব লিখিত আকারে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে জমা দেওয়া হবে।
২. এলডিপির ২৩ দফা প্রস্তাব
এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ জানান, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ২৩ দফা দাবি পেশ করেছেন। প্রস্তাবগুলোতে প্রশাসনিক সংস্কার, অবাধ নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এলডিপি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দিয়েছে।
৩. বিজেপির দাবি
বিজেপির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চালানো গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা উচিত।’ বিজেপি একটি নির্বাচন কমিশন লিয়াজোঁ কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দেয়।
৫. এনডিএমের মতামত
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘নির্বাচন ২০২৫ সালের জুনের পর আয়োজন সম্ভব হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড. ইউনূস আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে ভবিষ্যতেও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’
৬. লেবার পার্টির দাবি
লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার দাবি করেন। তার মতে, ‘পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য ব্যর্থ। তাদের দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন।’
৭. জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের বক্তব্য
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান নয়। এটি একটি অবৈধ সংবিধান।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনাকে ভারত থেকে এনে তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’
সংলাপ শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানান, আলোচনা মূলত রাষ্ট্র সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকেই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে আলোচনা হলেও, এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ ছাড়া নেয়া হবে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।