সেবা ডেস্ক: সরকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অভিযোগ রয়েছে হত্যা, নির্যাতন ও জননিরাপত্তা বিঘ্নের।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ছাত্র সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ছাত্রলীগ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরুর দিকে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংসতা চালিয়ে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
সরকারের ঘোষণা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ: ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময় হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত। দলটির ইতিহাস: ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রমাণ: ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের প্রমাণ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যা দেশব্যাপী ক্ষোভ তৈরি করেছে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে, যা দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।
এদিকে, সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ফলে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সংগঠনটির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় সংগঠনটি মুজিব বাহিনী গঠন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে, ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তর্কোন্দল, এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলাসহ নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ব্ল্যাকমেইল করে পতিতাবৃত্তি চক্র চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।