জামালপুর সংবাদদাতা: জামালপুরের মেলান্দহে বানিপাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মায়া বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়।
কর্মফাঁকি, দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহার, স্বাক্ষর জাল করে এসএমসি’র পকেট কমিটি গঠন, স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া-বিলভাউচার তৈরি, জন্ম নিবন্ধনের কথা বলে অর্থগ্রহণ করেও জন্মনিবন্ধন করে না দেয়া, ধর্মীয় অনুভূতি-সামাজিক নৈতিকতার উপর আঘাত, উপবৃত্তির অনিয়ম এবং প্রতিহিংসাবশত শিক্ষার্থীকে সমাপনি পরিক্ষার সনদ বিতরণ না করাসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসি দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল-মানবন্ধন অব্যাহত রেখেছে। বিগত দিনে প্রশাসনের কাছে এই শিক্ষিকার অপকর্মের লিখিত অভিযোগ করেও, অদৃশ্য শক্তির বলে কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। শিক্ষিকার কথা-কাজ-আচরণ এবং পাঠদানে নি¤œগামী, শিক্ষার্থী সংকটসহ আরো কিছু সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হবার উপক্রম।
ম্যানেজিং কমিটি-অভিভাবক সদস্য রজব আলী, আব্দুর রশিদসহ বেশ ক’জন জানিয়েছেন,আমরা স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে আছি কি না? জানতাম না। শিক্ষা অফিসের তদন্ত টিমের মাধ্যমে জানতে পারি আমারদেকে স্কুল কমিটিতে রাখা হয়েছে। স্কুলের কাগজপত্রে যে স্বাক্ষরগুলো আছে, সেটা আমাদের না। আমরা কোন কাগজে স্বাক্ষরও করিনি। এসএমসির সদস্য আব্দুর রশিদ মেম্বারও একই অভিযোগ করেন। তদন্তকালে সাবেক সভাপতি ফাজিল হক বেপারির স্বাক্ষর জাল করে ¯িøপ প্রকল্পের টাকা নয়-ছয়ের বিষয়টিও ওঠে আসে।
স্কুল প্রতিষ্ঠাতা-জমিদাতা পরিবার এবং অভিভাবক সদস্য আমানুল্লাহ জানান-আমার ছেলে মোঃ নাইমের জন্ম নিবন্ধনের কথা বলে টাকা নিয়েও সমাধান করে দেননি ওই শিক্ষিকা। পরে ১৫ শ’ টাকা খরচ করে জন্ম নিবন্ধন পেয়েছি। আরেক অভিভাবক মানিক মন্ডল জানান-আমার দুই ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কথা বলে ৯শ’ টাকা নিয়েছে। জন্মনিবন্ধন করে দেন নাই। টাকাও ফেরত দেননি। পরে আমার সন্তানকে অন্যত্র ভর্তি করিয়েছি। আমানুল্লাহ আরো জানান-ঈদের বন্ধের মধ্যে স্কুলের ফ্যান-লাইট-পানির লাইনের মটর চালু দেখে ওই শিক্ষিকাকে জানালে উল্টো আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন।
অভিভাবক জয়নাল আবেদিন জানান- বেসরকারি সংস্থা সাদাকা ওয়েলফেয়ার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামুল্যে স্কুল ব্যাগ, খাতা-কলম, ক্যালকুলেটর-জ্যামিতি বক্স, স্কেল বিতরণ করেছে। পরদিন আমার সন্তান এবং অন্যান্য শিশুদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর, জ্যামিতি বক্সসহ অর্ধেক খাতা-কলম রেখে দেয় ম্যাডাম। এতে কোমলমতি শিশুরা কান্নাকাটি করে বাড়িতে চলে যায়। বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ রেখে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, ওই শিক্ষিকা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ লাঞ্চিত করেছে।
দাতা পরিবার ও অভিভাবক দুদু বেপারি জানান-আমার মেয়ে দিশামনি ৫ বছরে মাত্র একবার উপবৃত্তি পেয়েছে। বাকি উপবৃত্তির টাকা কোথায় গেলো? মা সমাবেশের জন্য বাচ্চাদের কাছ থেকে নিয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। আর বাচ্চাদের দিয়েছে একটা সাগর কলা, পাউরুটি এবং একটা সিঙ্গারা। পরে জানতে পারি ¯িøপ প্রকল্পের টাকায় মা সমাবেশের আয়োজন করেছে।
ছাত্র ভর্তির জন্য মাইকিং খাতের খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ কোন দিন মাইকিং করা হয়নি। স্কুলের কম্পিউটার-ল্যাপটপের হদিস নাই। স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ম্যাডামের জন্য প্রায়ই কচুপাতা-লতা-শাকসবজি সংগ্রহ এবং মাছ কাটিয়ে নেয়া হয়।
মাও. রহমতুল্লাহ জানান-স্কুলের সকল শিক্ষার্থীরা আমার মক্তবে পড়তো। আমি ও মুফতি আছিমদ্দিন স্কুলের পাশ দিয়ে রাস্তায় চলাকালে শিক্ষার্থীরা আমাকে ছালাম দেয়। এই ক্ষোভে মায়া ম্যাডাম আমাকে এবং শিক্ষার্থীদের গালিগালাজসহ লাঞ্চিত করেছে। ম্যাডামের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে গ্রামবাসিকে অশিক্ষিত-মুর্খ ও ভিক্ষুক বলে গালি দিয়েছে।
অভিভাবক মোস্তাক আহমেদ জানান-আমার মেয়ে মুসলিমা সমাপনি পরিক্ষায় পাশ করেছিল। সনদ চাইতে গেলে দুর্ব্যবহার করে সনদ ছিড়ে ফেলেছে। পরে অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে না পেরে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। যোবায়ের (১৬) নামে এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ২০১৯ সালে মায়া ম্যাডামের বিরুদ্ধে এলাকাবাসির বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করেছিল। কোন কিছু না বুঝেই অন্যান্যদের দেখাদেখি আমিও মিছিলে যাই। এ ক্ষোভে সমাপনি পরিক্ষায় পাশ করলেও; আমাকে সনদ দেয়নি। অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে।
এলাকাবাসি ময়নুল ইসলাম এবং আলী হায়দার সুমন জানান-একযুগেরও উপরে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে আর কত দিন চলবে? একজন পুরুষ হেড মাস্টার প্রয়োজন। স্কুলের মাঠ নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলটি যেন কুনো ব্যাঙের ঘর।
মোবারক আলী জানান-১০/১২ বছর আগে সহকারি শিক্ষিকা আতিয়া বেগম পলি ৩ বছরের ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। দীর্ঘ ছুটির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পলি ম্যাডামের ননদ; মায়া বেগম ডেপুটেশনে এসে এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদটি যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন। ভাবীর ছুটি এবং ননদের ডেপুটেশনের অন্তরালে রহস্য উদঘাটন করলে বহু অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। স্কুলের বিষয়ে কথা বল্লেই গ্রামের মানুষকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারসহ মামলার ভয় দেখানো হয়।
এ ব্যাপারে ইউএনও এসএম আলমগীর জানান-মায়া বেগমের বিরুদ্বে এলাকাবাসির অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষা অফিসকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) আব্দুল হামিদ জানান-ওই শিক্ষিকার বিরুদ্বে আনিত অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।
রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে একটু সময় লাগবে। মায়া বেগমের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্কুলের আয়-ব্যয়ের সকল ভাউচার আমার কাছে আছে। কম্পিউটার (ল্যাপটপ) আমার বাসায় রাখছি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।