সেবা ডেস্ক: ঢাকা চেম্বারের গবেষণা অনুযায়ী, কাঁচা বাজারের পণ্যের দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় ৯ গুণ বেশি পর্যন্ত বেড়েছে। মজুত ও বাজারব্যবস্থার অদক্ষতা দায়ী।
কাঁচা বাজারের পণ্যের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: ডিসিসিআই জরিপ |
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্প্রতি এক গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে দাম ৯ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অদক্ষ বাজারব্যবস্থা, সরবরাহে ঘাটতি, মজুত সীমাবদ্ধতা এবং পরিবহন খরচ দায়ী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
পণ্যের উৎপাদন ও খুচরা পর্যায়ের বিশাল দামের ফারাক
জরিপে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যয় প্রতি কেজি ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা হলেও আগস্টে খুচরা বাজারে তা ২৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে—প্রায় ৫ গুণ বেশি। সম্প্রতি এই দাম আরও বেড়ে ২২০-৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে, যা গত সপ্তাহে ৪০০-৫০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।
হলুদের উৎপাদন ব্যয় ৩৪ টাকা ৭৬ পয়সা হলেও, খুচরায় তা ৩২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৯.৩০ গুণ বেশি। বরিশালে এই ব্যবধান সর্বোচ্চ ২০১১ শতাংশ পর্যন্ত উঠে গেছে।
মূল কারণ এবং সমাধানের পরামর্শ
সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “মূল্যবৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মজুত, পরিবহন, এবং বাজারব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানো জরুরি।” তিনি ট্যারিফ ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের ওপর জোর দেন, যা মৌসুমভেদে আমদানি শুল্ক কমাতে বা বাড়াতে সহায়তা করবে।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেছনে কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলার জটিলতা, টাকার অবমূল্যায়ন, এবং সরবরাহ ব্যবস্থার অদক্ষতা বড় কারণ।
জরিপের পরিসংখ্যান:
- মোটা চালের দামের ফারাক: ৫৬৬%
- মসুর ডালে: ১০২০%
- শুকনা মরিচে: ৩৪৪%
- রসুনে: ২০৪%
- আমদানি পণ্যে: সর্বোচ্চ ৩৮% বেশি বিক্রি
- আদা আমদানি খরচ: ১৭১.৫৫ টাকা | খুচরায়: ২৩৮ টাকা
- শুকনা মরিচ: আমদানি খরচ ২৯৫ টাকা | খুচরায়: ৩৬৫ টাকা
সরকারি পর্যবেক্ষণ ও নীতিমালা জোরদার করার তাগিদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সায়েরা ইউনুস বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ বার নীতি সুদহার পরিবর্তন করলেও বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহম্মদ জানান, “দেশে আবাদি জমি ১ শতাংশ হারে কমছে। ফলে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পারলে উৎপাদন বাড়বে।”
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. মশিউল আলম বলেন, “ট্যারিফ ক্যালেন্ডার থাকলে দেশীয় মৌসুমে শুল্ক হ্রাস বা বৃদ্ধি করা যাবে, যা স্থানীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দেবে এবং আমদানিপ্রক্রিয়াও সহজ হবে।”
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।