শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: ইতিহাস জানতে হলে যেতে হবে জামালপুরের মেলান্দহের কাপাসহাটিয়া গ্রামে অবস্থিত গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরে।
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে একান্তভাবেই জানা প্রয়োজন।
আমাদের পূর্ববর্তী অনেক বিপ্লবী- স্বাধীনতা সংগ্রামী-জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীদের ইতিহাস জানতে হলে যেতে হবে জামালপুরের মেলান্দহের কাপাসহাটিয়া গ্রামে অবস্থিত গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরে।
আমরা যে বাঙালি-বাংলাদেশি এটার শত বছরের ইতিহাস- ঐতিহ্য-শেকড়কে ধারণ করছে এ আশ্রম ও জাদুঘর। এ দেশের ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান, পরবর্তীকালে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আমলের অনেক তথ্য- তত্ত্ব-উপাত্তের বিশাল ভান্ডার প্রদর্শন করা হচ্ছে এই আশ্রম ও জাদুঘরে।
এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে স্বদেশী আন্দোলনের সময়কার এই আশ্রমে ব্যবহৃত চরকা, চেয়ার, টেবিলসহ নানান দুষ্প্রাপ্য উপাদান ও দুর্লভ বইপত্র, আলোকচিত্র এবং নিদর্শন।
জানা যায়, ১৯৩৪ সালে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাসির উদ্দিন সরকার (১৮৯২-০৭.১১.১৯৭৭)। তিনি তদানীন্তন জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন। যুব বয়সেই মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানকল্পে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন তিনিও দেখেছিলেন। এ লক্ষে তিনি জীবনে ঝুঁকি নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন অহিংস, সত্যাগ্রহ আন্দোলনে। অনেক নির্যাতন ও নিপীড়নের স্বীকার হয়েছিলেন তিনি।
নাসির উদ্দিন সরকারের ইন্তেকালের পর এ আশ্রমটির হাল ধরেছিলেন তাঁর কন্যা রাজিয়া খাতুন (মৃত্যু ০৫.০২.২০০৭) ও পুত্র মোয়াজ্জেম হোসেন।
নাসির উদ্দিন সরকারের আদর্শকে তাঁরা মনে প্রাণে ধারণ করতেন। বর্তমানে নাসির উদ্দিন সরকারের পৌত্র হিল্লোল সরকার এই আশ্রম ও জাদুঘর তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করছেন। তিনিও তাঁর বাপ-দাদার আদর্শকে ধারণ করে এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই আশ্রম ও জাদুঘরকে মহিরুহে পরিণত করছেন।
১৩.০৯.২০২৪ তারিখে বিশিষ্ট গবেষক, কবি, সাংবাদিক ও সৈকত সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শাহজামাল, খ্যাতিমান শিক্ষক ও সাংবাদিক মো. ফরিদুল ইসলাম ভাইয়ের সহযোগিতায় আমরা কয়েকজন এই আশ্রম ও জাদুঘর দেখে এলাম। এই আশ্রম ও জাদুঘর দেখে আসতে পেরে আমরা নিজেদেরকে সম্মানিত বোধ করেছি।
ছাত্রজীবনে মহাত্মা গান্ধীর জীবনী পাঠ করে প্রীত হয়েছি। মেলান্দহের কাপাসাটিয়ায় এসে গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের অনন্য নিদর্শন দেখে আরো শাণিত হয়েছি, প্রেরণা পেয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও অন্যতম ট্রাস্টি হিল্লোল সরকারের দরদি আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়েছি।
গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের অনন্য নিদর্শন আমাদের গর্ব, জামালপুরের গর্ব, দেশবাসীর গর্ব।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।