টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইলের সাগরদিঘীতে অবস্থিত মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসাটি একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। যার প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক সাগরদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.হাবিবুল্লাহ্।
এই প্রতিষ্ঠানে একই অর্থবছরে চেয়ারম্যান তিনটি সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের প্রকল্প দিয়েছেন। টাকায় যার অঙ্ক ৭ লাখ ২৮ হাজার।
উন্নয়ন প্রকল্পের আইনে একই অর্থবছরে একইস্থানে বা প্রতিষ্ঠানে একাধিক প্রকল্প দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর ছিঁটেফোঁটাও মানেননি চেয়ারম্যান।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বললেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি, আর সাধারণ ১ম পর্যায়) কর্মসূচির উন্নয়ন প্রকল্পে সাগরদিঘী ইউনিয়নে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘সাগরদিঘী মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় রাস্তা এইচ.বি.বি করণ।’ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ লাখ টাকা।
একই কর্মসূচির টি,আর দ্বিতীয় পর্যায় এই ইউনিয়নে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘সাগরদিঘী (হাতিমারা) মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার মসজিদের টাইলস্ করণ।’ যার ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং একই কর্মসূচির টি,আর তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের নাম ‘মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় মাটি ভরাট।’
এই কাজে বরাদ্দ ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সরেজমিনে দেখা যায়, চেয়ারম্যান তিন নামে যে প্রকল্প দিয়েছেন নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও প্রতিষ্ঠান একটাই ‘মদিনাতুল উলূম মাদ্রাসা।’ মাদ্রাসাটির মালিক ও পরিচালক চেয়ারম্যান মো.হাবিবুল্লাহ্।
স্থানীয়রা জানায় এটি কোনো অবৈতনিক মাদ্রাসা নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান। এলাকাবাসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কথা হয় সাগরদিঘী গ্রামের রাসেল ভূইয়া
সঙ্গে। তিনি বলেন, তার সন্তান মদিনাতুল উলূম মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মাস শেষে বেতন দিতে হয় এক হাজার টাকা। মাসুম মিয়ার সন্তান পড়ে প্লে-তে। তিনি জানান মাসিক বেতন ৮০০ টাকা। পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বেতন এক হাজার ৫০০ টাকা বলে জানান হিমেল মিয়া নামে একজন অভিভাবক।
এদিকে একই অর্থবছরে একই প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রকল্প দিয়ে ক্ষান্ত হননি চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে গ্রামীণ
অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি,আর) কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি যে নির্দেশনা রয়েছে তাও মানা হয়নি। সরকারি নির্দেশনায় কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা আছে-গ্রামীণ এলাকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যশস্য সরবরাহ ও জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, ভরাট কাজে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও টাকা অনুসারে মাটি কাটা হয়নি। আর শ্রমিক দিয়ে নয়, কাজ হয়েছে যন্ত্র দিয়ে। প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন নারী ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম। তাকে প্রকল্পের কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উল্টো প্রতিবেদককে বলেন, কাজের হিসেব উপজেলায় লেখা আছে সেখান থেকে নেন। এই কথা বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
একইস্থানে একই অর্থবছরে একাধিক প্রকল্প দেওয়ার বিষয়ে উপজেলার একাধিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, এটা অন্যায় অনিয়ম। একইস্থানে এক অর্থবছরে শুধু টি,আর নয়, কাবিখা, কাবিটাসহ যেকোনো সরকারি বরাদ্দ দেওয়া আইন পরিপন্থী।
সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.হাবিবুল্লাহ্ একজন কোরআনের হাফেজও মাওলানা এবং আওয়ামী লীগ নেতা।
প্রকল্প দেওয়ার বিষয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোান নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সারা মেলেনি।
ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একইস্থানে প্রকল্প দেন চেয়ারম্যান। এভাবে প্রকল্প দেওয়া যায় না, বিষয়টি তাকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি মানতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, একই অর্থবছরে একই প্রতিষ্ঠানে একটার বেশি প্রকল্প দেওয়া বিধিবর্হিভূত। বেনাম ব্যবহার করে প্রকল্প দিয়ে থাকলে তদন্ত করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।