সেবা ডেস্ক: সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে কমপক্ষে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে জানিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক। তিনি বলেন, অন্তত ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করছি।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের কারো নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে, সিরাজগঞ্জে একদফা আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থী-জনতা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে রায়গঞ্জ উপজেলায় মারা গেছেন অন্তত ৫ জন, সিরাজগঞ্জ শহরে মারা গেছেন ৩ জন। রায়গঞ্জে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান তার উপজেলায় ৫ জনের মৃত্যুর খবর হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন। তার নাম প্রদীপ কুমার। তবে তিনি কোন গণমাধ্যমে কাজ করেন তা তিনি জানাতে পারেননি।
নিহতদের মধ্যে ইউএনও আরও যাদের নাম জানিয়েছেন তারা হলেন- উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরকার, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার লিটন ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন টিটো।
ইউএনও জানান, মৃতের সংখ্যা ছয়জন হতে পারে। তবে আরেকজনের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি।
ইউএনও জানান, সকাল থেকে রায়গঞ্জ উপজেলা সদরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও পৌরসভা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন।
প্রেস ক্লাবে ঢুকে সেখানেও ভাঙচুর চালিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। বিকেলের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী (এসএস সড়ক) সড়কে সকাল থেকে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। তিনি জানান, সংঘর্ষ চলাকালে মারা যাওয়াদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক রঞ্জু রহমান রয়েছেন। অন্য দুজন হলেন- সুমন শেখ (২৮) এবং আব্দুল লতিফ (৪২)। তারা যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী বলে বাচ্চু দাবি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টার দিকে এসএস সড়কে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দুই পক্ষের মধ্যে। এ সময় এসএস সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া মুজিব সড়কে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরির বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, জেলা পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন তারা।
সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর থানা, হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা, বেলকুচি ও উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও আগুন দিয়েছেন। বিকেলের দিকে শহরের পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রতন কুমার জানান, এ হাসপাতালে বিকেল পর্যন্ত ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ। হতাহতের সংখ্যা কতো তা অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বিকেলে বলেন, আন্দোলনে কয়েকজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। শহরের অবস্থা থমথমে থাকলেও এখন কোনো সংঘর্ষ চলছে না।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।