দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকানসহ উপাসনালয়ে হামলা

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকানসহ উপাসনালয়ে হামলা



এর মধ্যে নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দুদের মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়াদের উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

যশোর
যশোরে অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড়ির কয়েকজন মালিক বলেন, গতকাল বিকেলে কয়েক শ লোক বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকানে হামলা চালায়। এর মধ্যে ২০টি দোকানের মালিক হিন্দু। হামলাকারীরা দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

গতকাল সন্ধ্যায় বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এরপর রাতে ১০ থেকে ১২ জন রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের লিটন কুন্ডুর বাড়িতে ঢোকে। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনদের জিম্মি করে তিন ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে যায়। আজ সকালে একই গ্রামের শিমুল সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় তারা বাড়ির লোকজনের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে নারিকেলবাড়িয়া বাজারে গিয়ে হিন্দুদের অন্তত তিনটি দোকান ভাঙচুর করে।

নারিকেলবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘হামলাকারীরা বাজারে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় বাজারের অন্তত ২৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হয়। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন।’

গতকাল রাতে উপজেলার শালবরাট গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলা চালায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। এই পাড়ায় ৬৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। মুখে কালো কাপড় বেঁধে হাতে রামদা নিয়ে তারা পাঁচ থেকে ছয়টি বাড়িতে যায়। তারা দুটি পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে না পারায় তারা একজন বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করে। তারা একজনের বাড়ি থেকে তিনটি গরু এবং অপর একজনের বাড়ি থেকে দুটি ছাগল নিয়ে যায়।’

এই পাড়ার বেশ কয়েকজন বলেন, ভয়ে রাতে পাড়ার সবাই পাশের বাগানে কোনোরকমে ছিলেন। আজ সকালে পুরুষেরা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
উপজেলার সেকেন্দারপুর গ্রামে গতকাল রাতে একদল মুখোশধারী তিনটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি হিন্দু বাড়িতে চার দফায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

ধলগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ দেবনাথের মানিকদোয়া গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা গোয়াল থেকে দুটি গরু নিয়ে যায়। এরপর রাতে একদল লোক আন্ধারকোটা গ্রামের দীপংকর বিশ্বাসের বাড়িতে চার দফা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ওই বাড়ি থেকে চারটি গরু, ২৫টি হাঁস, ১৫টি মুরগি, ৪০টি হাঁসের ডিম, দুই বস্তা চাল এবং একটি বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ে যায়। তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না পেয়ে তাদের ঘরের মধ্যে রেখে হামলাকারীরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে যায়। ঘরে থাকা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তাঁরা প্রাণে রক্ষা পান।

দীপংকর বিশ্বাস বলেন, ‘খবর পেয়ে হামলার কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে এসেছি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। খুব ভয়ে আছি। কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না।’

উপজেলার নতুনগ্রামের স্বপন কুন্ডু, শেখর ঢালী, বল্লামুখ গ্রামের অরবিন্দু স্বর্ণালংকার, অমল স্বর্ণালংকার ও মোহন্ত কুন্ডুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটপাট করা করা হয়। এ ছাড়া গতকাল গভীর রাতে একদল লোক উপজেলার সুলতাননগর গ্রামের ঋষিপল্লির কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে।

মনিরামপুর উপজেলার আম্রঝুটা গ্রামের দিলীপ সিংহের বাড়িতে গতকাল রাতে হামলা চালায় একদল লোক। এ সময় তারা তাঁর দোতলা বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে সন্ধ্যায় একদল লোক উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা বাজারে দিলীপ সিংহের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং দোকানে থাকা মালামাল নিয়ে যায়।

গতকাল বিকেলে একদল লোক অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বারান্দী গ্রামের মনিশংকর রায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। মনিশংকর রায় বলেন, হামলাকারীরা কুড়াল দিয়ে গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে। তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা নগদ চার লাখ টাকা ও সাত ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।

সন্ধ্যার দিকে হামলাকারীরা পায়রা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বারান্দী গ্রামের বিষ্ণুপদ দত্তের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা বারান্দী গ্রামের রবিন বিশ্বাস, যুধিষ্ঠির বিশ্বাস ও মহেন বৈরাগীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ব্যবসায়ী কৃষ্ণ দত্তের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার পাশাপাশি স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করা হয়।

নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়িতে ও চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উপজেলার সোনাদিয়ায় উপজেলা হিন্দু পরিষদের সভাপতি সহদেব সাহার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি নারীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে হাতিয়া থানায় ও কোস্টগার্ডকে ফোনে জানানো হলেও কেউ ঘটনাস্থলে যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তমরুদ্দি বাজার সংলগ্ন গ্রামের সাহাপাড়ার দিলীপ সাহার বাড়ি, লোকেশ সাহার বাড়ি এবং সোনাদিয়া ইউনিয়নের উপজেলা হিন্দু পরিষদের সভাপতি সহদেব সাহার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এরপর তারা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তমরুদ্দি বাজারে আশোক সাহার দোকান, পার্থ সাহার দোকানসহ তিনটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে ক্ষতিগ্রস্ত  পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলা হিন্দু পরিষদের সভাপতি সহদেব সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়িতে হামলা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির কর্মী মুন্না ও রাজুর নেতৃত্বে। গতকাল বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁর মাকেও মারধর করা হয়। একই হামলাকারীরা আজ বেলা একটার দিকে চর চেঙ্গা বাজারে তাঁর দোকানে হামলা-ভাঙচুর চালায় এবং মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

তমরুদ্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তানভির আহমেদ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী এসব হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত ছিলেন না। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকজন হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।

ঢাকার ধামরাই
ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় ১০০ থেকে ১৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে স্থানীয় মীনা রানি দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বাড়ির লোহার মূল ফটক ভাঙচুর করেন। টিনের ঘরে ঢোকার ফটকটি ভাঙেন। বাড়ির বারান্দার পাশে থাকা তিনটি কক্ষের তিনটি জানালার কাচ, দুর্গা মন্দিরের সামনে কয়েকটি চেয়ার আর বাড়ির বাইরে থাকা গ্যারেজের দুটি প্রাইভেট কারের সব কাচ ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা।

এ বিষয়ে মীনা রানি দাস বলেন, ‘হঠাৎ করে ১০০ থেকে ১৫০ জন লোক আসলো। আইসাই ভাঙচুর শুরু করল। ভয়ে চুপ করে অন্য ঘরে ছিলাম। অনেক গালাগালি করছে। মন্দিরের সামনে গিয়ে মন্দির ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু তালা ভাঙতে পারেনি।’

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনন্ত মুখার্জির বাসভবন এবং পাশের এলাকায় থাকা মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অনন্ত মুখার্জির অভিযোগ, ‘সরকারের পদত্যাগের খবর শুনে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কুয়াকাটা পৌরসভায় একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি আমার বাসার দিকে আসে। একপর্যায়ে মিছিল থেকে লোকজন আমার বাসায় হামলা চালায়। হামলাকারীদের অনেকে আমার বাসায় ঢুকে পড়ে। বাসার প্রতিটি জিনিস ভেঙে চুরমার করেছে। আমার বাসার কোনো কিছুই রক্ষা হয়নি। এরপর হামলাকারীরা আমার বাসার পাশের মন্দিরটিতে হামলা চালায়। এতে মন্দিরের দরজা-জানালার ক্ষতি হয়েছে।’

বিকেল ৫টার দিকে কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

অভিযোগের বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজ মুসুল্লী বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ আওয়ামী লীগের পুরোনো অভ্যাস। কে বা কারা এ হামলা করেছে, তা আমি জানি না।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার এবং কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহমেদকে মুঠোফোনে কল করলেও তাঁরা ধরেননি।

নাটোর
নাটোরের লালপুরে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতির বাড়িসহ ছয়টি বাড়ি ও একটি মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ও রাতে এসব ঘটনা ঘটে।
উপজেলার জোতদৈবকী শিব ও কালীমন্দির কমিটি সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একদল লোক উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ও মন্দিরটির সভাপতি স্কুলশিক্ষক দ্বীপেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে হামলা করে। তারা তাঁর বাড়ির একটি ফটক ভেঙে ফেলে। তবে দ্বিতীয় ফটকটি ভাঙতে না পারায় বাইরে থেকে জানালা ভেঙে ফেলে। এরপর তাঁর ভাই নরেশ চন্দ্র সাহা ও প্রতিবেশী শিমুল সরকারের বাড়িতে হামলা করা হয়। তারা দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
নরেশ চন্দ্রের দাবি, দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা, চার ভরি স্বর্ণের গয়না, ল্যাপটপ, মুঠোফোন, চালের বস্তা লুট করে নিয়ে যায়।

এর আগে জোতদৈবকী শিব ও কালীমন্দিরে হামলা করে আটটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। দ্বীপেন্দ্রনাথ সাহা প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বাড়িটি মন্দিরের পাশেই। দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলার পরপরই তাদের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তিনি লালপুর থানায় বিষয়টি জানান। তবে থানার এক কর্মকর্তা পুলিশ পাঠাতে পারবেন না বলে জানান।

গতকাল রাতে উপজেলার মাধবপুর পালপাড়াতে কলেজশিক্ষক দ্বীগেন্দ্রনাথ পাল ও রণেন্দ্রনাথ পালের বাড়িতে হামলা হয়। সেখান থেকে মালপত্র লুট করে নেওয়া হয়। হামলাকারীরা রণেন্দ্রনাথের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। এ ছাড়া গতকাল উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক কার্তিক চন্দ্রের বাড়িতেও হামলা করা হয়।

মেহেরপুর
মেহেরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে এসব ঘটনা ঘটে।

আজ মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, পৌর শহরের হোটেল বাজার এলাকার বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্যের বাড়িতে গতকাল আগুন দেওয়া হয়। তাঁর দোতলা বাড়ির নিচতলা একেবারে পুড়ে গেছে। সেখান থেকে বই, আসবাব থেকে পোড়ার গন্ধ বের হচ্ছে।

এ সময় পল্লব ভট্টাচার্যের চাচাতো ভাই অঞ্চল ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাদা মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি। তাঁর বড় মেয়ে প্রিয়া ভট্টাচার্য সপরিবার জাপানে থাকেন। নবজাতক নাতিকে দেখতে তিনি জাপানে গেছেন। যখন দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়, তখন বাড়িতে কেউ ছিলেন না।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে একদল যুবক লাঠি, রড ও লোহার পাইপ নিয়ে পল্লব ভট্টাচার্যের বাসায় হামলা করে। বাড়ির প্রবেশ গেটের তালা ভেঙে প্রথমে লুটপাট করে। এরপর ঘরের আসবাব এক জায়গায় জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

একই সময়ে বড় বাজার এলাকার চিত্ত সাহার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। ওই দোকান থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এরপর হোটেল বাজারের রবীন্দ্রনাথ সড়কে লিনা ভট্টাচার্যের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। বাড়িতে থাকা চারজনকে মারধর করা হয়। লিনা ভট্টাচার্য বলেন, ‘১০-১২ জন ছেলে বাড়ির মূল ফটকের তালা ভেঙে দোতলায় গিয়ে আমাদের মারধর করে। পরে ঘরের আলমারি খুলে সোনার গয়না ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে চলে যায়।’

এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় মালোপাড়ার ছয়টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। যাওয়ার সময় তারা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন বলেন, গত সোমবার বিকেল থেকে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের সেবাও বন্ধ ছিল। এক রাতে মেহেরপুরের চিত্র পাল্টে গেছে।

দিনাজপুর
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ঈশানিয়া ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজারে সংখ্যালঘুদের অন্তত ৪০টি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে অন্তত ১০০ জন দলবদ্ধ হয়ে বাজারে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। পরে বাজারসংলগ্ন সহসপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বাধা দেন। পরে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী সহসপুর গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় রায় বলেন, ‘বাজারে ঢুকেই ভাঙচুর শুরু করে হামলাকারীরা। বেছে বেছে আমাদের দোকানগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলাকারীদের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ছিল। দোকান ছেড়ে পালিয়েছি। পরে চোখের সামনে মালামালগুলো লুট করে নিয়ে গেছে। গ্রামের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় আমরা পাড়ার সবাই সামনে দাঁড়ালে ওরা চলে যায়।’

এদিকে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ফুলতলা শ্মশানঘাট এলাকায় মাঠে নির্মাণাধীন হরিসভা ঘর, দুর্গামন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।

গতকাল বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত দিনাজপুরের সব মন্দির ও হরিসভা বাসরে পাহারা বসিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। তাদের সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় মুসলমানরা ছিলেন। রাত থেকে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও ভাঙচুর না করতে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম রায় বলেন, জেলায় হিন্দুদের অন্তত ১০-১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সবাই আতঙ্কে আছেন।

গতকাল বিকেল থেকে দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বোচাগঞ্জ থানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করে অন্তত ৫০টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার পুলিশের এক সদস্য।

চাঁদপুর
চাঁদপুরে পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের শহরের আদালত পাড়ার বাসায় এবং ফরিদগঞ্জে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
হরিপদ দাস বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর একদল লোক তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ির ৪/৫টি বসত ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বেশ কিছু আসবাবপত্র ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

শরীয়তপুর
শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকা মনসা বাড়ির একটি মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুর্বৃত্তরা মন্দিরটি ভেঙে দিয়ে কিছু আসবাবপত্র নিয়ে চলে যায়। মনসা বাড়ির ৮৯ শতাংশ জমির দেবোত্তর একটি পুকুর দখল করে রেখেছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। দখল হয়ে যাওয়া সেই পুকুরটি গত বছর উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। পুকুরের সেই জমিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত মার্চে কৃষ্ণ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।

ধানুকা মনসা বাড়ি মন্দির কমিটির নেতারা বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে ধানুকা মনসা বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে টিন ও ইট দিয়ে তৈরি মন্দিরটি ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। মন্দিরে থাকা কৃষ্ণ প্রতিমা ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
ধানুকা মনসা বাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সময় আতঙ্কে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। হামলাকারীরা আমাদের বাড়ি ভাঙচুরের জন্য চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। সেনাসদস্যরা আমাদের উদ্ধার করেছেন।’

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, মন্দিরে হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর  সহযোগিতা চাওয়া হয়।

রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জে গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ভাঙচুর করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রাচীর ভেঙে ইটও খুলে নেয় হামলাকারীরা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তাঁর দেশ ছাড়ার খবরে আনন্দমিছিল বের হয়। সেখান থেকে নানা স্থানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপজেলা পরিষদের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পরিষদ চত্বরের ভেতরে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। এরপর উপজেলা পরিষদের পাশে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ভবনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

রাত ১১টার দিকে তারাগঞ্জ চৌপথী এলাকায় অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের রাসায়নিক সারের গোডাউনে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা গোডাউনে থাকা ৪৬০ বস্তা সার লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে তিনি জানিয়েছেন।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, উপজেলা পরিষদে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভবনে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসায়িক গোডাউনে হামলা ও লুটপাটের খবর তিনি পেয়েছেন।

খুলনা
খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে ১১টি হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ও আজ এসব হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার বেশির ভাগ বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

উপজেলার বাণীশান্তা ইউপির চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আমতলা গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত কুমার গাইন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পূর্ব খেজুরিয়া গ্রামের সঞ্জীব মণ্ডলের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, ‘আজ বেলা একটার দিকে আমার বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর চেয়ারম্যান বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।’

কৈলাসগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মিহির কুমার মণ্ডলের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়নের ধোপাদী মধ্যপাড়ার বিধান মণ্ডলের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে।

এ ছাড়া কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান ভিটাভাঙা গ্রামের পঞ্চানন কুমার মণ্ডলের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিলডাঙ্গা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কামিনীবাসিয়া গ্রামের রণজিত কুমার মণ্ডল, তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বটবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নিত্য রঞ্জন কবিরাজ, বটবুনিয়া গ্রামের পঙ্কজ কবিরাজ, তিলডাঙ্গা মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রণজিৎ মণ্ডল, তিলডাঙ্গা ভাদালবুনিয়া গ্রামের সুরঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙর চালানো হয়েছে।

কৈলাসগঞ্জ ইউপির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকাল মধ্যরাতে ৫-৬টি মোটরসাইকেলে এসে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির গ্লাসগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে। ইউনিয়নের আরও ৫ থেকে ৬টি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। বুড়িরডাবর বাঁধ এলাকায় হিন্দুদের দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। এটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। এখানকার মানুষ আতঙ্কে আছে।

খুলনা জেলা যুব ঐক্য পরিষদের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করে লুটপাট করা হচ্ছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। আতঙ্কের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দিন কাটাচ্ছে। আমাদের ফোন দিচ্ছে। কী পরামর্শ দেব, তা বুঝতে পারছি না।’

এদিকে খুলনার কয়রায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সন্ধ্যা থেকে এসব ঘটনা ঘটে। আজ বিকেলে দেখা যায়, কয়রা উপজেলার গড়িয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক অরবিন্দ মণ্ডল ও সুজিত রায়ের বাড়ির চাল ভাঙা। ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

সুজিত রায় বলেন, ‘গতকাল দুপুর থেকে কয়রা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পাচ্ছিলাম। এমনিতেই ভয়ে ছিলাম। তারপর সন্ধ্যার দিকে আমার বাড়ির দিকে হামলা করতে আসছে একদল মানুষ, এমন খবর শুনে বাড়ির সবাইকে নিয়ে কিছুটা দূরে আরেক বাড়িতে চলে যাই। যেতে যেতেই শুনতে পাই বাড়িতে ভাঙচুরের শব্দ। ঘরের চাল থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র সব ভেঙেচুরে দিয়েছে।’

আজ সকালে কয়রার মহেশ্বরীপূর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদারের বাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বিজয় কুমার বলেন, সকালে যখন দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়, তখন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ঘরের সব মালামাল লুট করে নিয়ে বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে একদল মানুষ লাঠিসোঁটা, রড ও লোহার পাইপ, পেট্রোল নিয়ে বিজয় কুমারের বাসায় হামলা করে। বাড়ির প্রবেশ গেটের তালা ভেঙে প্রথমে লুটপাট করে। এরপর ঘরের আসবাবপত্র এক জায়গায় জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফরিদপুর
ফরিদপুরের মধুখালী ও সদরপুরে হিন্দুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মধুখালীর মেঘচামী ইউনিয়নের বামুন্দি গ্রামের বাসিন্দা পল্লি চিকিৎসক উত্তম কুমার রায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়েছে ওই চিকিৎসকের ফার্মেসি ও বাড়ির কালীমন্দির। গতকাল রাত ৮টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

পল্লি চিকিৎসক উত্তম কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে তিনি বামুন্দী বাজারে তাঁর ওষুধের দোকানে ছিলেন। এ সময় ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনতা তাঁকে মারতে আসে। এর আগে ওই বাজারে হোমিও চিকিৎসক মনোজ কুমার বিশ্বাসের দোকানে হামলা করে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। মনোজকে মারপিট করা হয়। হামলাকারীরা তাঁকে মারতে এলে মেঘচামী ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির উদ্দিন শেখ ও মধুখালী চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন মিয়া তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। পরে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে যান। দুর্বৃত্তরা বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বাড়ির মন্দিরে হরি ঠাকুর ও শান্তি মাতার প্রতিমা ভেঙে ফেলে। বাজারে তাঁর ওষুধের দোকানে লুটতরাজ করে। তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি কার কাছে এর বিচার চাইব?’

বাগাট ইউনিয়নের বাগাট বাজার এলাকায় অর্চনা বসুর একটি কাপড়ের দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানটি বাগাট-নওপাড়া সড়কে অবস্থিত। হামলার পর ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে ইউনিয়নের সিতারামপুর গ্রামে অবস্থিত স্কুলশিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাসের বাড়িতে। হামলা করা হয়েছে বাগাট বাজারে অবস্থিত রাজকুমার মিষ্টান্ন ভান্ডার দোকানে।

মধুখালী-নওপাড়া সড়কের কাছে বিপ্লব সাহার একটি ময়দার মিলে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে।

সদরপুর উপজেলার হাট কৃষ্ণপুর বাজারে সুবীর কুমার সাহার ওষুধের দোকান ও তরুণ সাহার মুদি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল রাতে এ ঘটনা ঘটে হাটকৃষ্ণপুর বাজারে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছিন কবির বলেন, ফরিদপুরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
(ads1)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top