যশোরের হিন্দুপাড়ার বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর-লুট

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: যশোর শহরের বেজপাড়ার বনানী সড়কে পরেশ বসুর বাড়ির নিচতলায় বাবা-মাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন লক্ষ্মী রানী পাল। তাঁর আয়ের একমাত্র অবলম্বন একটি সেলাই মেশিন। 

যশোরের হিন্দুপাড়ার বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর-লুট



শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গত সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে লক্ষ্মী রানীর সেই অবলম্বন সেলাই মেশিন, রান্নার চুলা, গ্যাসের সিলিন্ডার ও আলমারিতে রাখা ভাইয়ের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর ১০ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন সোমবার থেকে লক্ষ্মী রানীর পরিবারের সদস্যরা প্রাণভয়ে এলাকাছাড়া। অন্য এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন।

শুধু লক্ষ্মী রানী পাল নন, একই সময়ে একই পাড়ার বাসিন্দা চাকরিজীবী শংকর কুমার মল্লিক ও ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা নামের দুজনের বাড়ির ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করার চেষ্টা করে। মূল ফটক ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে জানালার থাই কাচ ভাঙচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এ ঘটনার পর থেকে শহরের বেজপাড়ার বনানী সড়ক এলাকার হিন্দুপাড়ায় ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই পাড়ায় অন্তত ২০০টি হিন্দু পরিবারের বসবাস। প্রতিটি বাড়ি থেকে লোকজন রাতে পাহারা দিচ্ছেন। তারপরও রাতে অজানা লোকজন মোটরসাইকেল নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছে। এ কারণে আতঙ্ক তাঁদের পিছু ছাড়ছে না।

আজ বুধবার দুপুরের দিকে বেজপাড়ার হিন্দুপাড়ায় দেখা গেছে, এলাকায় সুনসান নীরবতা। প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন কেউ ঘোরাঘুরি করছে না।

সোমবার রাতে হামলা হওয়া গোবিন্দ সাহার বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, গোবিন্দ সাহা নিজেই ভেঙে দেওয়া জানালার কাচ পরিষ্কার করছেন। মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ালে তিনি অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি আশ্বস্ত হন।

হিন্দুপাড়ার মানুষের এখন নিরাপত্তা কেমন, জানতে চাইলে গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘ওই দিন রাত সোয়া ৯টার দিকে ২০–২৫ জন দুর্বৃত্ত রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের পাড়ায় হামলা করে। আমরা পরিবারের সবাই ঘরে জড়সড় হয়ে জানালা দিয়ে সব দেখছি। আমার বাড়ির প্রধান ফটকে ৭-৮ জন মিলে লাথি মেরে ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে জানালার কাচে ইট মেরে ভেঙে ফেলে।’

লক্ষ্মী রানীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বারান্দার জানালার থাই গ্লাসটি ভাঙচুর করা। বারান্দায় রাখা সেলাই মেশিনের স্ট্যান্ডটি পড়ে আছে কিন্তু মেশিন নেই। দুই ঘরের আসবাব তছনছ করা। আলমারি ভাঙচুর করা।

বাড়ির মালিক পরেশ বসুর স্ত্রী লক্ষ্মী বসু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমাদের ভাড়াটে লক্ষ্মী রানী পাল ও তাঁর পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর স্বামী থেকেও নেই। ভরণপোষণ দেন না। তাঁর আয়ের একমাত্র অবলম্বন একটি সেলাই মেশিন। সেটিও দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। এমনকি রাইস কুকারের রান্না করা ভাত ফেলে সেটিও নিয়ে গেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

শংকর কুমার মল্লিকের বাড়ির ভাড়াটে বিপ্লব কুন্ডু বলেন, ‘তিন বাড়িতে হামলার পর আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। আতঙ্কে নারী–পুরুষ সবারই নির্ঘুম রাত কাটছে।’

গোবিন্দ সাহা নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি একবার টহল দিয়ে সব দেখে গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনও এখন রাতে গিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করে আসছেন। তারপরও আমরা স্বাভাবিক হতে পারছি না। আতঙ্ক আমাদের পিছু ছাড়ছে না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, স্থানীয় ভাড়াটে আবদুল জলিলের ছেলে মো. সাগরের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। যদিও সাগরকে এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্যও জানা যায়নি। তাঁর সঙ্গে যারা ছিল, তাদের প্রায় সবারই মুখ বাঁধা ছিল। যে কারণে অন্যদের কেউ চিনতে পারেনি।

এদিকে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হাতে লাঠি নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত শহরের রেলসড়কে অবস্থিত যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ছেলে পার্থপ্রতিম নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাথ কম্পিউটারে হামলা করে লুটপাট করেছে। এ সময় দোকান ও তিনটি গুদামে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এসি, রাউটার ও আমদানি করা যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

পার্থপ্রতিম নাথ বলেন, ‘২৪ বছর ধরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি সাজিয়েছি। মাথায় জাতীয় পতাকা হাতে লাঠি নিয়ে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে চার কোটি টাকার বেশি মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে খবর দিলে শেষ দিকে গাড়ি আসে। কিন্তু লুটপাট ঠেকানো যায়নি। বাবা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে লড়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন। আমরা ব্যাংকের কাছে কোটি কোটি টাকা ঋণী। আমরা এখন বেকার। বাড়িতে বসে আছি। নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় বসে গেলাম।’

একই সঙ্গে মোহিত নাথের ব্যক্তিগত অফিস ও তাঁর প্রকাশনায় প্রকাশিত দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকা অফিস ভাঙচুর করে ১০টি কম্পিউটার লুট করে নিয়ে গেছে বলেও পার্থপ্রতিম জানান। একই জায়গায় অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোং মদের পরিবেশক সুকুমার কুমারের এফএল শপ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

আজ রেলসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নাথ কম্পিউটার নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির দরজার শাটার ভাঙা। দোতলার পত্রিকা অফিস ও মোহিত নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের থাই কাচ ভাঙা। এ সড়কের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ আছে। হামলার ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর কোনো হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য পুলিশ সজাগ আছে। সমাজের অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। হামলার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ads1)
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top