জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিলুপ্ত ছিটমহলে ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ৯ম বর্ষপূর্তি পালন করেছে সাবেক দাসিয়ারছড়া।
বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষ্যে তারা ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের বিরল ইতিহাসসহ তাদের ন্যায্য অধিকারের নানাবিধ উন্নয়নের কথা বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে সমাবেশে তুলে ধরেন। সমাবেশ মঞ্চে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের মানুষজন আলোর মিছিলসহ নানা আয়োজনে কেক কেটে ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা একটি পুর্নাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামো ইউনিয়ন পরিষদের দাবির মধ্যদিয়ে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বালন করে দিনটিকে স্মরণ করেন বিলুপ্ত ছিটের অধিবাসীরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় বাংলাদেশ ভারত সাবেক ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের দাসিয়ার ছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খাঁনসহ বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এক মত হয়ে প্রধানসন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়াকে একটি ইউনিয়ন পরিষদের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুমের মাধ্যমে স্বারক লিপি প্রদান করা হয় । এর পূর্বে কালিরহাট বাজারে ছিটমহল আন্দোলনের নেতা আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সাবেক বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ এজাহার আলী। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নওয়াবুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মিলন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান শামিমা আক্তার পারুলসহ অনেকে।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমম্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খাঁন জানান, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ৯ বছর আগে মুক্তি পাওয়া দিনটিকে স্মরণ করতে দাসিয়ারছড়ায় রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ কেককাটা হয়েছে। ১৮টি মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও কয়েকটি মন্দিরে হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়াকে একটি ইউনিয়নের দাবি জানিয়ে বেশ কিছু নাগরিক স্বারক লিপি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, সাবেক ছিটমহল গুলোর জনগোষ্টিকে দেশের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করতে রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত,দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ে সম্মত হয় শেখ হাসিনা-নরেন্দ মোদি সরকার। আন্দোলনের পুর্ণতা পান দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ। বাংলাদেশের ভু-খন্ডে যুক্ত হয় ভারতের ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের ভু-খন্ডে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর জমি বাংলাদেশকে ভেরত দেয় ভারত। এছাড়াও তারা অপদখলীয় ২ হাজার ২৬৭.৬৮২ একর ভূমিও বাংলাদেশের নিকট হস্তান্তর করে। এনিয়ে বাংলাদেশকে মোট ১৯ হাজার ৪২৮ দশমিক ৩১ একর জমি ফেরত দেয় ভারত। অপরদিকে ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল যার পরিমান ৭ হাজার ১১০.০২ একরসহ অপদখলীয় ২ হাজার ৭৭৭.০৩৮ একর ভারতকে ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। পরবর্তিতে উভয় দেশের ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময়ের পর চুড়ান্ত জরিপে বাংলাদেশ ৩৬ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জমি বেশী পায়। যাহা বিনা রক্তপাতে সরকারের কূটনৈতিক সফলতার বহিঃপ্রকাশ বলে অনেকেই মনে করেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।