জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরে কোটা সংস্কারের দাবীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ট্রেনে হামলা, ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে হামলার ঘটনায় ট্রেন চালক ও শিশুসহ অন্তত ১০ জন যাত্রী এবং সংঘর্ষে ১০ থেকে ১২ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
বুধবার সকালে কোটা সংস্কারের দাবীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরের মির্জা আজম চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মির্জা আজম চত্বরে জড়ো হতে থাকে।
বিক্ষুদ্ধরা কোটা সংস্কারের দাবীতে ও ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা এবং মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ¯েøাগান দিতে থাকে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। প্রায় দেড় ঘন্টা জামালপুরের সাথে মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
এছাড়াও কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সড়ক অবরোধ তুলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের শেখেরভিটা রেলক্রসিংয়ে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং রেলপথ অবরোধ করে।
এর কিছু সময় পর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেন থামানোর জন্য মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এতে ট্রেন চালক আবুল কালাম (৬৪) ও সহকারী ট্রেন চালক ইদ্রিস আলী (৪১), ট্রেনের যাত্রী মো: আলম (৩০), তার মেয়ে আশামনি (৫), ছেলে শাহিন (৪) সহ অন্তত ১০ জন ট্রেনযাত্রী পাথরের আঘাতে আহত হন। আধাঘন্টা ট্রেনটি আটকে রাখার পর অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের দিকে অগ্রসর হয়। কলেজের ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে আলমগীর (২২), জান্নাত (১৯), জিয়া (১৯) সহ ১০ থেকে ১২ জন আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়।
এ সময় অনেকেই পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এদিকে কলেজের বাইরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতর অবরূদ্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়ায় আন্দোলনকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর আন্দোলনকারীরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে ছাত্রলীগ নেতারা বাইরে বেরিয়ে আসে। কলেজ ত্যাগ করে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের পাঁচরাস্তা হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে গেইটপাড় এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়।
এ সময় তারা প্রধান সড়ক এবং জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর-সরিষাবাড়ী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে ও আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে, এতে বন্ধ থাকে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল।
গেইটপাড় এলাকায় দেড় ঘন্টা অবস্থান নেয়ার পর বিকেলে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের দাবী জানিয়ে তাদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।