সেবা ডেস্ক: আজানের সময় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলে আজান শোনা ও আজানের জবাব দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো মুআজ্জিন যা বলে তা বলা, শুধু ‘হাইয়া আলাস সালাহ, হাই য়ালাস ফালাহ’ বললে এর জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়তে হয়।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ ما يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ
অর্থ: ‘যখন তোমরা আজান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলো’। (সহিহ বুখারি: ৬১১)
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুয়াজ্জিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে তখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি যদি অন্তর থেকে তার জবাবে বলে, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। মুয়াজ্জিন ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললে জবাবে ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, মুয়াজ্জিন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’ বললে জবাবে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ’ বলে, তারপর মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সলাহ’ বললে জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বললে জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, তারপর মুয়াজ্জিন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বললে জবাবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, সে জান্নাতে যাবে’। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৫)
উল্লিখিত হাদিস, সেগুলোতে বর্ণিত নির্দেশনা ও প্রতিদান ঐ আজানের ব্যাপারে প্রযোজ্য যা প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে নামাজের আগে দেওয়া হয়। রেডিও-টিভিতে যে রেকর্ডকৃত আজান প্রচার করা হয়, তা শুনে জবাব দেওয়া সুন্নত নয় এবং উল্লিখিত প্রতিদানও এ রকম আজানের জবাব দিলে পাওয়া যাবে না।
আজানের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্য দোয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) আজানের পর তার জন্য দুরুদ পাঠ ও ওসিলা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা নবিজির (সা.) জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে, কেয়ামতের দিন তারা নবিজির শাফাআত বা সুপারিশ পাবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, إذا سمعتم المؤذن؛ فقولوا مثل ما يقول، ثم صلوا عليّ فإنه من صلى علي صلاة واحدة؛ صلى الله عليه بها عشرًا، ثم سلوا الله لي الوسيلة، فإنها منزلة في الجنة لا تنبغي إلا لعبد من عباد الله، وأرجو أن أكون أنا هو، ومن سأل الله لي الوسيلة؛ حلت له الشفاعة
অর্থ: ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে, তা বলো। এরপর আমার ওপর সালাত পাঠ করো; যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ বার রহম করবেন। এরপর আমার জন্য ওসিলা চাও। ওসিলা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান। আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই এই মর্যাদা লাভ করবে এবং আমি আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে, সে আমার সুপারিশের হকদার হবে’। (সহিহ মুসলিম: ৭৪৮)
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে এই দোয়া পড়বে, اللَّهُم ربِّ هذه الدَّعْوَة التَّامة، والصَّلاة القَائمة، آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةِ وَالفَضِيلة، وابْعَثْه مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذي وعَدْتَه
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআসহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও আসন্ন নামাজের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওসিলা ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন যার ওয়াদা আপনি করেছেন।
কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার হকদার হবে। (সহিহ বুখারি)
হাদিসে বর্ণিত এ দোয়াটিতেও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্য ওসিলা বা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রার্থনা করা হয়েছে। এ ২টি হাদিস থেকে বোঝা যায় আজান শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্য ওসিলা প্রার্থনা করলে বা এই দোয়াটি পড়লে কেয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শাফাআত পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।