প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নিয়ে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তারাও নজরদারিতে

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: গত এক যুগে বিসিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ক্যাডার-নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় নানামুখী তদন্ত শুরু হয়েছে।

প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নিয়ে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তারাও নজরদারিতে



দেশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার ও মামলা করে কারাগারে পাঠায়। পাশাপাশি মামলায় এজাহারভুক্ত সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিলসহ ১৪ জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। 

অন্যদিকে পিএসসির পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই অপরাধে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে সূত্র জানায়। 

এই চক্রে পিএসসির পদস্থ কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের ফাঁস করা প্রশ্নে চাকরি পাওয়া বিসিএস ক্যাডারদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ চলছে বলে জানা গেছে। এই সঙ্গে তাদের রাখা হয়েছে নজরদারিতে। 

এছাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যের বিষয়েও তদন্ত অব্যাহত আছে। পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং পিএসসির দুই কর্মচারীসহ ছয়জনের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে গত এক যুগে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্ন বিকিকিনির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের নাম। তাদের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্নফাঁস এবং প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া কেউই রেহাই পাবেন না। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

এদিকে কারাগারে থাকা পিএসসির তিন কর্মকর্তাসহ ১১ জনের মধ্যে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করবে সিআইডি। অন্যদিকে গ্রেফতার ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ সম্পদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে বুধবার চিঠি দিয়েছে পিএসসি।

সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় আবেদ আলী বিচারককে জানিয়েছেন, তিনি পিএসসির কোনো চেয়ারম্যানের গাড়ি চালাননি। তিনি চালিয়েছেন পিএসসির দুজন সদস্য ও একজন যুগ্মসচিবের গাড়ি। এছাড়া আদালতে আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। প্রশ্নফাঁসের টাকা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছেন বলে আবেদ আলী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা আদালতে অস্বীকার করেছেন। জোর করে এ বক্তব্য নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বিচারকের কাছে নালিশও করেন। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে যারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, আবেদসহ তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। তবে কতজন বিসিএস কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে তা প্রকাশ করতে চাননি তিনি। বলেন-এসব স্পর্শকাতর বিষয় এখনই গণমাধ্যমকে না জানানোর নির্দেশনা রয়েছে। তদন্ত শেষ হয়ে সিআইডি প্রধান এ বিষয়ে মিডিয়া ব্রিফ করতে পারেন।

এদিকে প্রশ্নফাঁসে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার যেসব অভিযোগ সামনে এসেছে তা খতিয়ে দেখতে পিএসসির যুগ্মসচিব আব্দুল আলীম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে। তারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। জানা গেছে, পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং বিশেষজ্ঞ সবাইকে সন্দেহে রেখে চলছে তদন্তকাজ। প্রয়োজনে সব পক্ষকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান পিএসসির যুগ্মসচিব ড. আব্দুল আলীম খান বুধবার বিকালে বলেন, যেসব ইস্যুতে আমাদের কাজ করতে বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করছি। আমরা বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীদের শনাক্ত করব এবং প্রশ্নফাঁস রুখতে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে কমিশনকে সুপারিশ করব।

এদিকে পল্টন থানায় সিআইডির করা মামলায় ৩১ আসামির মধ্যে পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। গত মঙ্গলবার একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে।

পিএসসির প্রশ্নফাঁস শুরু হয় বহু আগ থেকেই। বিষয়টি জানত পিএসসিও। আবেদ সিন্ডিকেট বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২০০২ সালে ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করেছে। এর পাশাপাশি পিএসসির অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তারা ফাঁস করে।

ওই সময় (২০০২) পিএসসির সদস্য ছিলেন মাহফুজুর রহমান। তার ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী। পিএসসির প্রশ্নফাঁসে আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কাস্টমার জোগাড়ের কাজে নিয়োজিত ছিল। উপরমহল থেকে প্রশ্নফাঁস হতো আর আবেদ আলীরা প্রার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দিত। শুধু তাই নয়, গোপন স্থানে নিয়ে প্রার্থীদের আগেভাগেই এসব প্রশ্ন পড়ানো হতো। এভাবেই আবেদ আলী দিনে দিনে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান। আবেদ আলী ছাড়াও এ চক্রের প্রত্যেকেই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনেছেন।

আবেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ : প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তাদের ব্যাংক হিসাবের সব তথ্যও চেয়েছে সংস্থাটি।

বিএফআইইউর সূত্র জানিয়েছে, সৈয়দ আবেদ আলী ও তার মালিকানাধীন ইউএসএ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় মঙ্গলবার। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো চিঠিতে হিসাব জব্দ করার পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর ফলে সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন ও ইউএসএ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে ৩০ দিন টাকা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া এসব হিসাবের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য পাঁচ দিনের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। সৈয়দ আবেদ আলীকে ইউএসএ এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ফেসবুকে ভাইরাল হন। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়।

সিআইডির পক্ষ থেকে ওইদিন ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় পিএসসি আইনে মামলা করা হয়। মঙ্গলবার ওই মামলায় গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে পিএসসির সাবেক ড্রাইভার আবেদ আলী, পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেন এবং লিটন সরকার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
(ads1)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top