দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাধীন মাদ্রাসা সুপারিন্টেন্ডেন্ট আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
সুপার আব্দুল কাদের লংকারচর দাখিল মাদ্রাসায় কর্মরত। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া, শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সুপার আব্দুল কাদের গত ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেওয়ানগঞ্জ সরকারি একেএম কলেজে'র সাবেক অধ্যাপক শেখ আহমেদে'র স্বাক্ষর জাল করে নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কাউকে না জানিয়ে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে গোপনেই সম্পন্ন করেন কমিটি গঠনের সকল আনুষ্ঠানিকতা। পরে তা অনুমোদনের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করেন। ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে পছন্দমত সভাপতি, অভিভাবক সদস্য, শিক্ষক সদস্য ও দাতা সদস্য মনোনীত করেন। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে মো: সাব্বির আহমেদ (সাবরেজিস্টার) কে, যিনি তার সদস্য মনোনয়নের ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। কমিটিতে সুপারের অনিয়মের সমর্থক শিক্ষক মো: আক্তারুজ্জামান ও সবুজ মিয়াকে সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। শিক্ষক মো: আব্দুল খালেক ও মো: ফজলুল করিম সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনলেও স্থানীয়দের দ্বারা উক্ত ফরম ছিনিয়ে নেয়ার নাটক সাজান সুপার আ: কাদের।
সম্প্রতি বর্তমান সভাপতি শেখ আহমেদ বিষয়টি অবগত হলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্ত কমিটির বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করবেন বলে উক্ত বোর্ড মারফত জানা যায়।
সভাপতি গত ২৬ জুন ২০২৪ ইং তারিখে সুপার বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রেরণ করেন। নোটিশে তিনদিনের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে। তিনদিন অতিবাহিত হলেও নোটিশের জবাব দেননি সুপার আ: কাদের।
সভাপতি অধ্যাপক শেখ আহমেদ বলেন, 'সুপার আব্দুল কাদের খুব চতুর লোক। প্রাতিষ্ঠানিক নানা বিষয়ে তিনি অনিয়ম করে থাকেন। তার এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম বিধায় আমার সভাপতিত্ব তিনি মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি। তাই আমার স্বাক্ষর জাল করে তড়িঘড়ি করে গোপনে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেন। নতুন কমিটি গঠনের পুরো আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।'
ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মো: মহর আলী জানান 'মাদ্রাসাটির জমিদাতা হিসেবে আমার বাবা আজীবন দাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুর পরে আমি দাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। সুপারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় নতুন প্রস্তাবনা কমিটিতে আমার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ কমিটির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিয়ম বহির্ভূত করা হয়েছে।'
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল কাদেরের কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে তিনি যথোপযুক্ত উত্তর না দিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
দেওয়ানগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, 'দুই বছরের জন্য ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন করা হয়। কমিটির মেয়াদ শেষ হবার তিন মাসের মধ্যেই বিধি মোতাবেক নতুন কমিটির প্রস্তাবনা করতে হয়। যেখানে সবকিছুর তদারকি করে থাকেন ইউএনও মহোদয়। তিনি আমাকে প্রিজাইটিং নিয়োগ দিলে আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। পরবর্তীতে সুপার রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। তবে ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, রেজুলেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনে সভাপতি বা কারো স্বাক্ষর জাল করা কিনা এ ব্যাপারে আমি অবগত নই।'
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।