মোঃ শাহ জামাল, জামালুর সংবাদদাতা: সমস্যার আবর্তে জামালপুরের মেলান্দহ মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। লোকসান পুষাতে প্রতিবছর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনের অংশ থেকে ভর্তুকী দিতে হচ্ছে।
১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে মেলান্দহ উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম হাসান হাজারী ময়েন এবং প্রথম ইউএনও বজলুর রহমান ভূইয়া যৌথভাবে খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশে আমিষের চাহিদা মেটাতে মৎস্য অধিদপ্তর ১ একর জমিতে ৪টি পুকুর খনন করে। খামারটিকে হ্যাচারির আওতায় আনতে এবং অত্যাধুনিকভাবে পরিচালনার জন্য মাছের ডিম থেকে পোনা উৎপাদন, গবাদি পশু পালনের যাবতীয় কার্যক্রমসহ বৃক্ষরাজির রোপনের মাধ্যমে সজ্জিত করা হয়। দক্ষ জনবল নিয়োগের পর খামারটি মাছের উৎপাদন-বিক্রি এবং সরবরাহের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ওই সময় মৎস্য খামারের নাম-যশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
দু’বছর চলার পর দেশের পটপরিবর্তনের ফলে খামারটি অচলাবস্থায় পড়ে। মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য ১৯৮৮ সালে খামারটি গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ১০ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করে। ১০ বছর পর ১৯৯৮ সালে খামারটি আবারো মৎস্য অধিদপ্তরের অধিনে চলে আসে। খামার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাত্র একজন কর্মকর্তা এবং কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়। তখন থেকেই খামারটি নানা অব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে। দীর্ঘদিন পর ২০২৬ সালে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খামারের কিছুটা সংস্কার হলেও; আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ খামারের পুকুরগুলোতে পানি না থাকায় মাছ উৎপাদনের উদ্যোগও ভেস্তে গেছে। বর্তমানে পোনা কন্ডিশনিং ইউনিট অকেজো হয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। খামারের অফিস-কাম ডরমিটরির পিলার-ছাদ ভেঙ্গে প্লাস্টার ধ্বসে পড়া শুরু হয়েছে। জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক লাইন-খুঁটিসহ আনুসাঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিও ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে এখানে মাছ চাষও নেই। নেই গবাদি পশু পালন কার্যক্রমও। খামারটি সচল থাকলে স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতো। এ মতাবস্থায় মাছের পোনা সরবরাহের জন্য অন্য জেলায় ধর্না দিতে ব্যয়ের পাল্লাও ভারি হচ্ছে। আমিষের চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখতে পারছে না এই প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে সারাবছর পুকুরে পানি ধরে রাখতে সাবমারসিবল পাম্পের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
খামার সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (মৎস্য) রেজাউল করিম জানান-সরকার প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। সরকার বরাদ্দ দেয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ভ্যাট কর্তন বাদে থাকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাকি প্রায় ১ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয় আমার পকেট থেকে।
প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক করার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, পুকুরে পানি সংরক্ষণের জন্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন, পুকুর খনন, গাইড় ওয়াল নির্মাণ, নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য জনবল নিয়োগসহ আনুসাঙ্গিক সমস্যার বিষয়ে আমার আগের অফিসারের আমল থেকেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর পত্রযোগে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে ইউএনও মাহবুবা হক জানান-আমি সবেমাত্র যোগদান করার পর শুনেছি এই প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থার কথা। খামার সচল করার বিষটি আমি খতিয়ে দেখবো।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।