সেবা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে প্রদান করা বাড়িগুলো গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের ১৮,৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করে পুনর্বাসন করেছি। এতে তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে এবং আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে এসেছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "আমরা ঈদ উপহার হিসেবে এসব ঘর দিয়েছি। দেশের জনগণের সেবা করাই আমাদের লক্ষ্য, কারণ তারা আমাদের প্রতি আস্থা রেখে বার বার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। সেই আস্থার প্রতিদান হিসেবে আমরা তাদের সেবা করছি। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে দেশের মানুষের সেবক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। এদেশের মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের জীবন সুন্দর করা।”
শেখ হাসিনা বলেন, “কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমেল-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমরা তালিকা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করবো।”
প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাট, কক্সবাজার এবং ভোলার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তাদের হাতে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮,৫৬৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২,৬৬,০১২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার দেশের যারা ভূমিহীন-গৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ের ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে তাদের জীবন বদলে গেছে।”
তিনি বৃক্ষরোপণ এবং অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
ঘর নির্মাণের কাজে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এবং আমি মুক্তি পাই।”
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু সেই স্বাধীনতার সুফল জনগণের ঘরে পৌঁছানোর আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় প্রদানের জন্য জাতির পিতা নোয়াখালিতে (বর্তমানে লক্ষীপুর) প্রথমে ঘর ও খাস জমি বিতরণ শুরু করেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অবৈধভাবে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতাসীনরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এলে আবার আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু করি। ১৯৯৭ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০টি পরিবারকে প্রথমে ঘর প্রদান করা হয়।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সঞ্চালনা করেন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।