সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ-ভারত রেল ট্রানজিট চুক্তি ভারতীয় পণ্য পরিবহনকে সহজ করবে, কিন্তু এতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রশ্ন উঠেছে। সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিশ্লেষণ।
২২ জুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৩টি ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রেল ট্রানজিট অন্যতম। এই চুক্তির ফলে ভারত বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে নিজেদের ভূখণ্ডে যেতে পারবে। এই চুক্তি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। অনেকে হিসাব করছেন বাংলাদেশ ও ভারত কী পরিমাণ সুবিধা ও অসুবিধা পাচ্ছে।
প্রথমে জানতে হবে ‘ট্রানজিট’ কী। যদি ‘এ’ দেশ ‘বি’ দেশের রাস্তা ব্যবহার করে ‘সি’ দেশে পণ্য পরিবহন করে তাহলে ‘বি’ দেশ ‘এ’ দেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিলো। এতে ‘বি’ দেশের ভূমি ব্যবহার হচ্ছে এবং যানবাহন হবে ‘এ’ দেশের।
(ads1)
ট্রান্সশিপমেন্টের মূল কথা হলো, এক দেশের যানবাহন অন্য দেশে ঢুকবে না, পণ্য সীমান্তে এসে বাহন পরিবর্তন করবে। যেমন, ভারতের পণ্যবাহী জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পণ্য খালাস করে। তারপর বাংলাদেশের ট্রাকগুলো সেই পণ্য ভারতের আসাম-ত্রিপুরার সীমান্তে পৌঁছে দেয়।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি অনুযায়ী, যদি ‘এ’ দেশ ‘বি’ দেশের ওপর দিয়ে ‘সি’ দেশে পণ্য পরিবহন করতে চায়, তাহলে ‘বি’ ট্রানজিট দিতে বাধ্য। তবে যদি ‘এ’ দেশের আরেকটি অংশে যেতে হয়, তাহলে ‘বি’ ট্রানজিট দিতে বাধ্য নয়।
রেল ট্রানজিট চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চালু করতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশি ভূখণ্ড দর্শনা-ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-চিলাহাটি হয়ে ভারতীয় ট্রেন পুনরায় ভারতে প্রবেশ করবে।
বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন চলে। তিনটি যাত্রীবাহী ও দুটি পণ্যবাহী। বর্তমানে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্রস্তাবিত ট্রানজিট চুক্তি অনুযায়ী, ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ৩০০ কিলোমিটার পথ কমাবে। এতে ভারতের রেলপথের দূরত্ব ও ট্রেন পরিচালনার ব্যয় কমবে।
(ads2)
ট্রানজিট সুবিধা ভারতের জন্য নতুন নয়। কয়েক বছর আগেও ভারতকে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তখন বাহন পরিবর্তন করতে হতো। নতুন রেল ট্রানজিট সুবিধা ভারতের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। এই পথ দিয়ে ভারত মিয়ানমারসহ আসিয়ানভুক্ত দেশে পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারবে।
বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি একটি ‘বারগেইনিং টুল’। ‘নন ট্যারিফ বেরিয়ার’, সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি বা পানিবণ্টন চুক্তি ইত্যাদিতে এই ট্রানজিট সুবিধা হতে পারে বাংলাদেশের কূটনৈতিক হাতিয়ার। তবে কূটনৈতিকভাবে সুবিধার আদান-প্রদান কেমন হবে, তা বোঝা যাবে কয়েক বছরের মধ্যে।
২০২২ সালে ভারত বাংলাদেশকে বিনা মাশুলে স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সে সুবিধা এখনো পায়নি বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন এই রেল ট্রানজিট দেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি সমস্যা হতে পারে। তবে সরকার বলছে, এই চুক্তি দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি বাস্তবায়নের পর তিস্তা মহাপরিকল্পনা, বন্দরগুলোর সুবিধা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধা আদায় করতে হবে। রেল ট্রানজিটে ন্যায্য মাশুল নিশ্চিত করতে হবে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, রেল ট্রানজিটে বাংলাদেশকে লাভবান হতে নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে। ভারত যেমন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে, তেমনি বাংলাদেশকেও ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে সুযোগ সুবিধা নিতে হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।