শফিকুল ইসলাম, রৌমারী: কুড়িগ্রামের রৌমারীর চরাঞ্চলে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে এ এলাকার জনদূর্ভোগ।
কাচাপাকা রাস্তা ভেঙ্গে খানা খন্দের সৃষ্টি, নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন, যানবাহন চলাচলে ব্যাহত, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া, গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা।
বন্যা কবলিত এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র।
রৌমারীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে |
জানা গেছে, ভারতের আসাম প্রদেশে হাটশিংগিমারী জেলার মানকারচর থানা এলাকা দিয়ে বয়ে আসে কালো নদী। ভারতের পাহাড়ী ঢলে এই কালো নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার পূর্বাঞ্চলে জিঞ্জিরাম নদীতে মিলিত হয়।
অপর দিকে উপজেলার উত্তরাঞ্চল ভারত থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েও ভারতীয় পাহাড়ী ঢল নেমে এসে বন্যার সৃষ্টি হয়।
গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে বন্যা হয়। বন্যার পানি বিপদ সিমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গত তিন থেকে বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে জনদূর্ভোগ। বন্যার পানির ¯্রােতের কারনে অধিকাংশ কাচাপাকা রাস্তা ভেঙ্গে খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাশাশি যানবাহন চলাচলে মারত্মক ভাবে ব্যাহত সৃষ্টি হচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না তাদের স্কুলে। বন্যার পানিতে তলিয়ে পাট আংশিক ৩৮, আউস ধান ৮, তিল ৯, চিনা ৫, শাকসবজি ১৮ ও মরিচ ৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
অপর দিকে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র ¯্রােতের কারনে প্রায় ১’শ ২০টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।
বন্যার পানি বৃদ্ধির শুরুতেই কয়েকটি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়। বর্তমানে ওই পরিবারগুলো অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল।
এদিকে বালিয়ামারী বর্ডার হাট ও চর নতুনবন্দর স্থলবন্দরের পানি নিচে নেমে গেলেও সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বন্যার পানিতে বেশকিছু পুকুর তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও উপজেলা মৎস অফিসে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
নদীভাঙ্গন এলাকাগুলো হচ্ছে উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙ্গনের শিকার বকবান্দা ব্যাপারী পাড়া, ও খেওয়ার চর, রৌমারী সদর ইউনিয়েনের চুলিয়ারচর ও বড়াইবাড়ী, চর শৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের সোনাপুর, চর গেন্দার আলগা, ঘুঘুমারীসহ কয়েকটি গ্রাম। এসব এলাকার মানুষের প্রাণের দাবী তারা রিলিফ চায় না, চায় নদী শাসন।
পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগের প্রার্দুভাব। শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষ।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু জানান, হঠাৎ বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। এনিয়ে জেলা মিটিংয়ে আলোচনা কথা বলবো।
রৌমারীতে বন্যার পানিতে তলিয়ে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি |
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন পুকুরের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পানেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান খান জানান, পানিবাহিত রোগ কেবল শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভর্তি হচ্ছে। তাদেরকে গুরত্বসহকারে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। খাবার স্যালইনসহ অন্যান্য ঔষুধ মুজুদ রয়েছে।
রৌমারীতে পানি বাহিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি শিশু ও বৃদ্ধরা |
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধরী বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, আশা করি কয়েকদিনের মধ্যেই পানি শুকিয়ে যাবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে এবং তালিকা তৈরি করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
উপজেলা নিবাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সরেজমিনে গিয়েছি এবং এবিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।