সেবা ডেস্ক: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পোল্যাকান্দিতে নদী ভাঙনরোধে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী নিজেদের অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করছেন বাঁশের বাঁধ।
এতে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনকবলিত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উজান থেকে বয়ে আসা পানির তীব্র স্রোতের আগ্রাসী আঘাত থেকে রক্ষা করবে পাড়কে। সাময়িকভাবে বন্ধ হবে ঐ এলাকার ভয়াবহ ভাঙন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনরোধে প্রতিকার চেয়ে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে কাজ না হওয়ায় গ্রামবাসী নিজেদের অর্থায়নে বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আমের আলী।
তিনি বলেন, আমরা নিরুপায় হয়ে নিজেদের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছি। আশা করছি- এতে সাময়িকভাবে হলেও এ অঞ্চল ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ কাজে অর্থের জোগান দিতে গ্রামবাসীদের অনেকটা ত্যাগ স্বীকার ও বেগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়ার পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্রের বামতীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাতটি স্থানে নির্মাণ হবে বাঁশের এই বাঁধ। এরইমধ্যে দুটি বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজে তাদের ব্যয় হবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এতে ভাঙনের হাত থেকে বেঁচে যাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, কয়েকটি পাকা মসজিদ ও অন্তত ৬০০ পরিবারের বসতবাড়ি। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাহাদুরাবাদ ইউপি সদস্য হাশমত আলী, ঐ ইউপির সাবেক সদস্য পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়ার আহাম্মদ আলী, আলতাফ হোসেন ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আমের আলী।
গ্রামবাসী জানান, ৪০ বছর আগে থেকে এ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। এর আগে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে পোল্যাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, ফারাজীপাড়া, মাদারের চর, মদনেরচর, গুমেরচররসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। একপাড় ভেঙে গড়েছে অন্যপাড়। ভাঙনকবলিত মানুষ বসতি স্থাপন করেছেন নদের জেগে ওঠা চরে। সময়ের বিবর্তনে ব্রহ্মপুত্র গতি পরিবর্তিত হয়। মোড় নেয় বিশালাকার। আবারো ভাঙন শুরু হয় নতুন বসতি স্থাপন করা জেগে ওঠা চরের দিকে।
বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে পোল্যাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া ও ফারাজীপাড়া। কয়েক বছর আগে থেকে ঐ গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে ক্রমাগত ভাঙন। এলাকাবাসী ভাঙনরোধে সরকারি পদক্ষেপের আশায় দৌঁড়ঝাপ করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। কিন্তু মেলেনি ভাঙনের কোনো প্রতিকার।
বাহাদুরাবাদ ইউপি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আহাম্মদ আলী বলেন, আমরা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনরত পাড়ের সাতটি স্থানে সাতটি বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, তাতে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধ হবে। এ কাজে ব্যয় হবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এ টাকার জোগান দিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। জানিনা কাজটি শেষ করতে পারবো কি-না। তিনি এ কাজে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন।
বাহাদুরাবাদ ইউপি সাবেক সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, নামাপাড়া ও ফারাজীপাড়াকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারিভাবে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বসতভিটা, আবাদি জমি রক্ষার তাগিদে এলাকাবাসীদের অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
বাহাদুরাবাদ ইউপি সদস্য হাশমত আলী বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পোল্যাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া ও ফারাজীপাড়া ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রতি বছর বিলীন হয় এ ওয়ার্ডের শত শত মানুষের বসতভিটা, আবাদি জমি। বর্তমানে পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি পাকা মসজিদ এবং নামাপাড়া গ্রামের দাখিল ও এবতেদায়ি মাদরাসা, মসজিদ মক্তবসহ কয়েকটি সরকারি স্থাপনা।
বাহাদুরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়া বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ইউপি তহবিল থেকে সহযোগিতা করার মত কিছু নেই। ব্যক্তিগতভাবে হলেও আমি তাদের ঐ কাজে সহযোগিতা করবো এবং সরকারি সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে বসতভিটা ও আবাদি জমি রক্ষায় পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ সত্যি প্রসংশনীয়। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
সংবাদ : ডেইলি বাংলাদেশ
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।