রায়েসির শাহাদাতে ইরানে ৫ দিনের শোক ঘোষণা

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মর্মান্তিক শাহাদাতের পর, ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী খামেনি ইরানে ৫ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। 

রায়েসির শাহাদাতে ইরানে ৫ দিনের শোক ঘোষণা

সোমবার সকালে প্রকাশিত এক বার্তায়, আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে সংঘটিত হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রায়েসির মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সর্বোচ্চ নেতা তার বার্তায়, রায়েসিকে একজন কর্মঠ ধর্মযাজক এবং একজন জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যিনি তার জীবন ইরানের জনগণ, দেশ এবং ইসলামের সেবায় উৎসর্গ করেছেন।
(ads1)

"এই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে, ইরানি জাতি হারিয়েছে একজন উষ্ণহৃদয়, বিনয়ী এবং মূল্যবান সেবক," আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রায়েসি অশুভাকাঙ্ক্ষীদের সমালোচনার মুখেও ইরানের জনগণের জন্য তার কঠোর ও সার্বক্ষণিক কাজ বন্ধ করেননি।

তিনি ইরানি জাতিকে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিতে এবং পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির লক্ষ্যে ইরানি সংসদ এবং বিচার বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনুমোদন দিয়েছেন।

আয়াতুল্লাহ খামেনি পূর্ব আজারবাইজানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রায়েসির সঙ্গে থাকা অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মৃত্যুতেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ান এবং তাবরিজের শুক্রবারের নামাজের নেতা ও প্রাদেশিক গভর্নর।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়েসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ান উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব আজারবাইজানে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হয়েছেন।

রায়েসি এবং তার সঙ্গী প্রতিনিধি দলবাহী হেলিকপ্টারটি রবিবার পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের বারজাকান এবং জলফা শহরের মাঝখানে অবস্থিত দিজমার বনে বিধ্বস্ত হয়।

এতে রায়েসি, আমির-আবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি, তাবরিজ শহরের জুমার নামাজের ইমাম সৈয়দ মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম এবং প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের এক সদস্য মেহদি মোসাভি ছিলেন। হেলিকপ্টারের পাইলট, সহ-পাইলট এবং ক্রুরাও চপারে ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট রায়েসি এবং তার সঙ্গী প্রতিনিধি দল আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে আরাস নদীতে একটি বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া


হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতের ঘটনায় ইরানজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে জনগণকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। শোক জানিয়েছে রাশিয়া, ইরাক, ভেনিজুয়েলা, পাকিস্তান, ভারতসহ অন্যান্য দেশ।
সোমবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শিয়া আল-সুদানি। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তাদের সঙ্গীদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, তার সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।

ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
(ads2)
গভীর শোক জানিয়েছেন ইয়েমেনের হুথি সুপ্রিম রেভোলুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুথি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ইরানের জনগণ, তাদের নেতৃত্ব ও রাইসি ও তার নিহত সহযোদ্ধাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের পরিবারকে ধৈর্য ও সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি।

নিহতদের প্রতি গভীর শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। ভারত-ইরান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণ করা হবে। ভারত এই দুঃখের সময়ে ইরানের পাশে আছে।

ইরান ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ভেনিজুয়েলার নিঃশর্ত বন্ধু ছিলেন রাইসি।

মস্কোয় ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও ইরানের প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।

রাইসির হেলিকপ্টারে সেদিন কী ঘটেছিল জানালেন আরেক হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা

ইরানে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ নয় আরোহীই নিহত হয়েছেন। খারাপ আবহাওয়ার কথা বলা হলেও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ঠিক কী ঘটে ছিল সেই কারণ এখনো সবাই অজানা। এবার এ ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে মুখ খুলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। ঘটনার দিন রাইসি ও আবদোল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাশেই আরেকটি হেলিকপ্টারে ছিলেন ইসমাইলি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ জানান, আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন শেষে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজের দিকে স্থানীয় সময় বেলা একটা নাগাদ হেলিকপ্টার তিনটি যাত্রা শুরু করে। ওই সময় আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিক ছিল। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি মাঝখানে ছিল। সামনে একটি ও পেছনে আরেকটি হেলিকপ্টার ছিল। পুরো বহরের দায়িত্বভার ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলটের ওপর।

যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরো উঁচুতে উঠে ভ্রমণ করার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

ইসমাইল বলেন, ওই সময় হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে যায়। ঘন মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের পাইলট প্রথম খেয়াল করেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমাদের পাইলট বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকেন। হেলিকপ্টারটি খুঁজতে থাকেন।

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার রেডিও ডিভাইসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি। এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি উচ্চতা কমিয়ে আনে এবং পাশের একটি তামার খনিতে অবতরণ করে, এমনটাই জানান গোলাম হোসেইন ইসমাইলি।

ইসমাইলি আরো বলেন, ওই সময় ‘অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্ট রাইসির নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধানকে বারবার কল করা হয়। কিন্তু তাদের কারোরই সাড়া পাওয়া যায়নি।

অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটরা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভিকে কল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও জানান ইসমাইলি।

ইসমাইলি বলেন, জটিল ওই পরিস্থিতিতে শুধু রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তার (আল-হাশেম) অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু শুধু জানান, একটি উপত্যকায় তাদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে।

এরপর ইসমাইল আরেকবার আল-হাশেমকে কল করতে সক্ষম হন। তখনো একই কথা জানান। মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির মুখপাত্র।

গোলাম হোসেইন ইসমাইলি, আমরা যখন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই, সেখানে সবার মরদেহ দেখি। বুঝতে পারি, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে একমাত্র আলে-হাশেম হয়তো ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top