সেবা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ইসরাইলকে সরাসরি সমর্থন দিলেও পর্দার আড়ালে ইরানের মজবুত ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া এবং চীন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও ইরনার।
এ মাসের ১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত ইসরাইল-ইরানের হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গন। আজ বুধবার বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
যেখান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ইসরাইলকে সরাসরি সমর্থন দিলেও পর্দার আড়ালে ইরানের মজবুত ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া এবং চীন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও ইরনার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের ওপর হামলায় মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে ইরান যেমন চীনের বেইদু স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করেছে, এর পাশাপাশি ব্যবহার করেছে রাশিয়ার গ্লনাস সিস্টেম। এ ছাড়া আগে জানা গিয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে ইউএভি (মনুষ্যবিহীন বিমান) তৈরির গবেষণা চালাচ্ছে ইরান। এ ধরনের কিছু ইউএভি ব্যবহার হয়েছে ইসরাইলে হামলার সময়। এ ছাড়া ইসরাইলে ইরানের হামলার আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাশিয়া।
শুধু তাই নয়, গেল বছর অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদস্য হিসেবে যুক্ত হওয়ায় ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া। সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠছে তারা। এদিকে পশ্চিমাদের হুমকি-ধমকিকে তোয়াক্কা না করে ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মতি জানায় ইরান। এর বিনিময়ে রাশিয়ার থেকে তারা নেয় উন্নতমানের যুদ্ধবিমান এবং আকাশপথে নিরাপত্তার প্রযুক্তি।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের মত, রাশিয়ার বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য প্রযুক্তি যদি ইরান কাজে লাগায়, তবে ইসরাইল হামলা করলে তার দাঁতভাঙা জবাব দিতে পারবে তেহরান। পশ্চিমা অনেক দেশই ইরানের এ হামলার নিন্দা জানালেও এ ইস্যুতে এতদিন চুপ ছিল চীন। অবশেষে ভাঙল সেই নীরবতা। নেতানিয়াহু বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে রইসি প্রশাসন একাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছে দেশটি।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এড়াতেও সক্ষম দেশটি। এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপও করেছেন ওয়াং ই। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর বেজিং ইসরাইলকে নয়, বরং ইরানকেই সমর্থন দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের। এদিকে ইসরাইলের ওপর নজিরবিহীন হামলার দায়ে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধে এমন পরিকল্পনা করছে তারা। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে এবং ইসরাইলকে ব্যাপক প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, আগামী দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আশা করছে, মার্কিন মিত্ররাও তাদেরকে অনুসরণ করবে।
গত শনিবার রাতে ইসরাইলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। ইরানের কয়েক ঘণ্টার আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরাইলের ১ বিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলারের মিসাইল এবং গোলাবারুদ খরচ হয়েছে। ইসরাইলে হামলায় ৪৫০ কেজি ওজনেরও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইরান। এ বিষয়ে ইসরাইলের গণমাধ্যম চ্যানেল-টুয়েলভ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
এতে ৪৫০ কেজি ওজনের একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। মৃত সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এটি। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইলে হামলার সময় এটি মৃত সাগরে পড়েছে। ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে একটি ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটির কাছে দেখা যায়। পাশে ফিলিস্তিনি-পতাকাযুক্ত আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি আসলেই ইরানের ছোড়া কি না তা কোনো পক্ষই নিশ্চিত করেনি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।