ইরানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: ইরানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির ইসফাহান শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়।

ইরানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল



মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে হামলায় ইসরায়েল কোনও ক্ষেপণাস্ত্র নয় বরং ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে ইরান।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকালে ইরানের সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলার কয়েক দিন পরই পাল্টা হিসেবে এ হামলা হলো।

ইসরায়েলের আজকের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল ইসরায়েল।

ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস বলেছে, মধ্যাঞ্চলের শহর ইসফাহানের একটি সেনাঘাঁটির কাছাকাছি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইরানের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, এটা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার কারণেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতের একটু পরেই ‘ইসফাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। আর এর ফলে ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।’

টেলিভিশনে বলা হয়, ইসফাহানের অবস্থা এখন স্বাভাবিক। আর স্থলভাগে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ইরানের এ ভাষ্য নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হেনেছে। তবে কোথায় আঘাত হানা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা দেননি। আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তাও জানাননি। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান যুদ্ধ এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আজকের হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাঁদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হলে এর ‘চরম জবাব’ দেবে তাঁর দেশ।


যে কারণে ইরানের ইসফাহান শহরকে লক্ষ্যবস্তু বানালো ইসরায়েল

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় ভোরে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান শহরে হামলা চালায় নেতানিয়াহু বাহিনী। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে- কেন ইসফাহানকে লক্ষ্যবস্তু বানালো ইসরায়েল?

ইরানের কোন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে নেতানিয়াহু বাহিনী?- এমন প্রশ্ন চর্চায় ছিল গেল কয়েকদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসে আকাশপথে পরমাণু স্থাপনা, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘাঁটিসহ অবকাঠামো ও অবস্থানগুলো সম্ভাব্য ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্য হতে পারে। এসব আশঙ্কা সত্যি করে, এমন স্থানে তেল আবিব হামলা চালিয়েছে যেখানে সত্যিই পরমাণু স্থাপনা রয়েছে।

ইসফাহান শহরটি ইরানের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত। এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজধানী তেহরানের দক্ষিণে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহরটি পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক বিমানঘাঁটির আবাসস্থল। সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের স্থাপনা এবং সামরিক ঘাঁটিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রয়েছে।

এছাড়া ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল নাতাঞ্জসহ ইসফাহানে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা অবস্থিত। এটি ইরানের সর্ববৃহৎ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এছাড়া এখানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের বিশাল কমপ্লেক্সও রয়েছে বলে জানা যায়।

এর আগে, সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলার প্রতিশোধে শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। এরপরই তেহরানকেও মোক্ষম জবাব দিতে ছক কষতে থাকে তেল আবিব। আর হামলা চালালে এমন জবাব দেয়া হবে যাতে অনুশোচনায় ভুগতে হয় তেল আবিবকে- এমন সতর্কবার্তাও দেয় তেহরান।

যেকোনো আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলকে ‘মাটির সঙ্গে মিশিয়ে’ দেয়া হবে বলেও হুমকি দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। বলেন, ইরানের সক্ষমতার পুরোটা দেখালে বিশ্ব মানচিত্র থেকে ‘উধাও’ হয়ে যাবে ইসরায়েল। তাই বাড়াবাড়ি না করতে দেয়া হয় একের পর এক হুঁশিয়ারি।

তেহরানের হুমকির পর ইসরায়েলের মিত্রসহ পশ্চিমারাও ইরানে হামলা চালাতে নিষেধ করে। তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নেতানিয়াহু ইরানের ভূখন্ডে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। ইরানে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানায় মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ। পরে তাদের বরাতে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

তবে এমন খবরের পর তেহরান বলছে, তারা বেশ কয়েকটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং দেশটিতে ‘এখনো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ হয়নি।

এদিকে ইসরায়েলের এই হামলার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, দু'পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মকাণ্ডে কেবলই পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে তেল আবিব-তেহরান যুদ্ধ বেঁধে যায় কিনা, তা-ই এখন শঙ্কার বিষয়।

ইরানে ইসরায়েলের হামলা, ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে যা জানা গেল

দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলের রাতভর এই হামলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন ইরানের সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার সিয়াভোস মিহানদোস্ত।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দেশটির সরকারি টিভিকে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

মিহানদোস্ত বলেন, ইরানের ইস্পাহান শহরে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সেখানকার বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সন্দেহজনক একটি বস্তু শনাক্ত করেছে।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।

বদলা হিসেবে ইরান গত শনিবার রাতভর ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয় বলে দাবি করে তেল আবিব।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলকে ইরানে পাল্টা হামলা না চালানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।

কিন্তু ইসরায়েল এ আহ্বান উপেক্ষা করে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোরে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাল।
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top