জি এম ক্যাপ্টন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সাধারণ জেলেদের অজান্তে মৎস্যজীবী সমিতি নিবন্ধন, সরকারী জলাশয় ইজারা এবং ওই সমিতির সভাপতি সম্পাদক কর্তৃক ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় সভাপতি সম্পাদকসহ ২৬ জেলের নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সভাপতি ও সম্পাদক বাঁধ দিয়ে ২৪ টি জেলে পরিবারের সদস্য সহ প্রায় দুই শতাধিক জেলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
রবিবার দুপুর ১২ টায় ফুলবাড়ী টু নাগেশ্বরী সড়কের উপজেলা পরিষদ মুল ফটকের সামনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ক্ষীরোদ চন্দ্র বিশ্বাস, লক্ষী রানী বিশ্বাস, নয়ন বালা দেবী বিশ্বাস ও কামাক্ষা চন্দ্র বিশ্বাস প্রমূখ ।
পরে মানববন্ধনকারীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ কুটিচন্দ্র খানা গ্রামের ২৪ জন জেলের অজান্তে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ওই গ্রামের ধরনী চন্দ্র বিশ্বাস ন্যাঙ্গা (সভাপতি) এবং কবিরমামুদ গ্রামের মজিদুল হক মফি (সাধারণ সম্পাদক) ফুলবাড়ী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নিবন্ধন করেন।
এরপর ফুলবাড়ী উপজেলার সরকারী জলাশয় 'ফুলসাগর লেক' (বাংলা ১৪২৭ থেকে ২৪২৯) তিন বছরের জন্য ৪৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নেন।
কিন্তু ইজারা মেয়াদ শেষ হলেও ইজারা পাওনা বাবদ প্রাপ্য টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন।
এদিকে দীর্ঘ সময়েও সরকারী বকেয়া পাওনা পরিশোধ না হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা সকল সদস্যের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে ২ মার্চ নোটিশ প্রদান করে৷
নোটিশে জনপ্রতি ১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। নোটিশ পেয়ে সাধারণ জেলেরা জানতে পারেন যে মৎস্যজীবী সমিতিতে তারাও যুক্ত আছেন এবং বকেয়া টাকার দায় তাদেরকেই বহন করতে হবে।
এঘটনায় সাধারণ জেলেরা সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিচারের দাবীতে মানববন্ধন সমাবেশ ও বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মৎস্যজীবী ক্ষীরোদ চন্দ্র বিশ্বাস, লক্ষী রানী বিশ্বাস, নয়ন বালা দেবী বিশ্বাস ও কামাক্ষা বিশ্বাস জানান, সাহায্য দেয়ার কথা বলে আমাদের ছবি ও ভোটার কার্ড নিয়ে প্রতারক ন্যাঙ্গা ও মফি সমিতি গঠন করে জলাশয় লিজ নিয়েছে।
আমরা কিছুই জানিনা। তারা তিন বছর জলাশয়ের মাছ বিক্রি করে সমস্ত টাকা আত্নসাত করেছে। আর ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় আমাদের নামে মামলা হয়েছে। আমরা এ প্রতারণার উপযুক্ত বিচার চাই।
ফুলবাড়ী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সস্পাদক মজিদুল হক মফি জানান, সঠিক সময়ে ইজারারের টাকা পরিশোধ না করায় আমিসহ ২৬ জন জেলের নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার বিষয়ে আগামী ৫ এপ্রিল সার্টিফিকেট শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ফুলবাড়ী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি ধরণী কান্ত বিশ্বাস জানান, মোটা ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে সময় মতো টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। আমি নামমাত্র সভাপতি ছিলাম। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। জানিনা আমাদের কি হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ জানান, ইজারা মুল্য পরিশোধ না করায় নিরীহ জেলেদের নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি।
এ ব্যাপারে আমার তেমন করনীয় কিছুই নাই। কারন এটি আদালতের বিষয়। তারপরও জেলা প্রশাসক স্যার জানতে চাইলে তাকে প্রকৃত ঘটনা গুলো জানানো হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।