সেবা ডেস্ক: কালেমা, নামাজ, রোজা যাকাত ও হজ্জ ইসলাম ধর্মের মৌলিক ৫টি স্তম্ভ। রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ |
দ্বিতীয় হিজরিতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মাদির উপর রোজা ফরজ করেছেন।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
আর রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘…সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৩৬৮)
তবে ইসলামি শরিয়তের আলোকে সবার জন্য রমজানের রোজা রাখা ফরজ নয়। বরং নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছে ইসলাম।
যাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ:
ইসলামে বিশ্বাসী: ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্যই রমজানের রোজা ফরজ করেছে ইসলাম। সুতরাং অমুসলিমদের রমজানের রোজা রাখার কোনো বিধান নেই। অমুসলিম ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলে তা ধর্তব্য হবে না। তবে কোনো অমুসলিম রমজানে ইসলাম গ্রহণ করলে এর পর থেকে তিনি রোজা রাখবেন। রমজানের বিগত দিনগুলোর জন্য তাকে কাজা করতে হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি কাফেরদের বলে দিন, তারা যদি (কুফর থেকে) বিরত হয়ে যায়, তবে আগে যা কিছু ঘটে গেছে ক্ষমা করে দেওয়া হবে’। (সূরা: আনফাল, আয়াত ৩৮)
সাবালক ও মানসিকভাবে সুস্থ: ইসলামের দৃষ্টিতে সাবালক ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ। একইভাবে মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা আবশ্যক। সুতরাং নাবালক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা জরুরি নয়। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের ওপর থেকে কলম (বিধানের আবশ্যকতা) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (এক) ঘুমন্ত ব্যক্তি—যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (দুই) নাবালক—যতক্ষণ না সে সাবালক হয় এবং (তিন) পাগল—যতক্ষণ না সে জ্ঞানসম্পন্ন হয়’। (আবু দাউদ: ৪৪০৩; তিরমিজি: ১৪২৩)
রোজা পালনে সক্ষম: শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা আবশ্যক। অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি রোজা রাখার সক্ষমতা রাখে না, তার জন্য রোজা রাখা জরুরি নয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা যে ব্যক্তি সফরে আছে, তারা সেই সংখ্যা অন্য দিনগুলোতে পূরণ করবে’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
নিজ ঘরে বা শহরে অবস্থানকারী: নিজের শহর বা ঘরে অবস্থানকারী ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা জরুরি। মুসাফির হয়ে শরিয়ত নির্ধারিত দূরত্বের কোনো শহর বা দেশে গেলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। যদি মুসাফির হওয়ার অন্য শর্তাবলিও পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...যে ব্যক্তিরা সফরে আছে, তারা সেই সংখ্যা অন্য দিনগুলোতে পূরণ করবে’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন স্রাব থেকে মুক্ত নারী: ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন স্রাব নামাজ-রোজার প্রতিবন্ধক। তাই এই ২ সময়ে নামাজ-রোজা আদায় করা যাবে না। আদায় করলেও তা আদায় হবে না। পরে রোজা কাজা করে দিতে হবে, তবে নামাজ কাজা করতে হবে না।
হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর নারীরা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন: ‘এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সালাতের নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।