সেবা ডেস্ক: সারাদেশে কয়েক দফায় অভিযান চালানো হলেও কমছে না অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম্য।
খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে ১২শ’র বেশি বেসরকারি হাসপাতাল চলছে নিবন্ধন ছাড়াই।
এসব অবৈধ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা থাকেন জীবন-মরণ সংকটে। সম্প্রতি খতনা করাতে আসা দুই শিশুর মৃত্যুর পর অবৈধ হাসপাতালের বিষয়টি ফের সামনে আসে। এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও তৎপর এসব হাসপাতালের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। তবুও কীভাবে এসব হাসপাতাল দিনের পর দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের।
হাইকোর্টকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সারাদেশে এক হাজার ২৭টি অবৈধ বা অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং এক হাজার ৫২৩টি বৈধ বা নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ১২শ’র ওপরে অনিবন্ধিত হাসপাতাল রয়েছে দেশজুড়ে। এ ছাড়া নবায়নের জন্য আবেদন রয়েছে কয়েক হাজার। নতুন করে হাসপাতাল তৈরির আবেদনও রয়েছে। কিন্তু এসবের বাইরেও অন্তত কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই পরিচালনা চালাচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। যেগুলোর বেশিরভাগেরই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক, উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি না থাকলেও অনেক হাসপাতালেই করা হয় নানা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারও। যার খেসারত দিতে হয় রোগীদের। এমনকি কাউকে কাউকে জীবন দিয়েও খেসারত দিতে হচ্ছে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয় শিশু আয়ান। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে মারা যায় সে। এই ঘটনার পরপরই জানা যায়, নিবন্ধন ছাড়াই প্রায় এক বছর ধরে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আবুল হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গত বছরের আগস্টে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও ত্রুটি থাকায় আবেদনটি অনুমোদিত হয়নি। নিবন্ধন না করেও এতদিন হাসপাতালটি কীভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালটি আমাদের ডেটাবেজে না থাকায় আমরা এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। একটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল নিবন্ধিত হওয়ার পরেই তত্ত্বাবধানে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিবন্ধনের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে।
এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন। ওই দুই চিকিৎসক হলেন ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাঈদ সাব্বির আহমেদ ও সার্জন তাসনুভা মাহজাবীন।
এই নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখনই রাজধানীর মালিবাগে আরেক বেসরকারি হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে প্রাণ যায় আরেক শিশুর। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারে চিকিৎসকদের ভুলে মারা যায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আহনাফ তাহমিদ। চিকিৎসকরা তাকে খতনার জন্য পূর্ণ অ্যানেস্থেসিয়া দিলে সেই ঘুম আর তার ভাঙেনি। পরে জানা যায়, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ারই অনুমোদন ছিল না। তাৎক্ষণিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে সিলগালা করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে গত বছর হাতের অপারেশন করতে আসা পাঁচ বছরের শিশু মাইশার পেট কাটার ঘটনায় আলোচনায় আসে রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি। ওই ঘটনায় হৃদয়বিদারক মৃত্যু হয় মাইশারও। পরবর্তীতে জানা যায়, এই হাসপাতালটিরও ছিল না বিএমডিসির সনদ। নিয়ম-বহির্ভূতভাবেই চালানো হচ্ছিল এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালটিও বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এমনই আরেকটি হাসপাতাল রাজধানীর ডেমরা আমুলিয়ার আইচি হাসপাতাল। ‘স্কাইভিউ ফাউন্ডেশন পরিচালিত’ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালটির সামনে, যেখানে ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারের ভিজিট মাত্র ৫০ টাকা। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখেন মাত্র ২০০ টাকায়। হাসপাতালটির এমন প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অসহায় রোগীরা একটু সুস্থতার আশায় চিকিৎসা নিতে যান হাসপাতালটিতে। আর তখনই শুরু হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেলিনা বেগম নামে এক রোগী অভিযোগ করেন, জরায়ুর টিউমার অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি হলে চিকিৎসক ডা. সুলতানা পারভীন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চার রকমের আলট্রাসনোগ্রামই করানো হয় সেলিনার। সব কিছু চূড়ান্ত করার পরই নেওয়া হয় তাকে অপারেশন থিয়েটারে। পরিকল্পনামতো শুরু হয় অস্ত্রোপচারও। কিন্তু আধাঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটারের বাইরে এসে ডা. সুলতানা পারভীন রোগী সেলিনা বেগমের পরিবারকে জানায়, ‘আমরা রোগীর পেট কেটেছি। কিন্তু এই অপারেশন আমার পক্ষে সম্ভব না। সেলাই করে দিচ্ছি। সেলাই শুকালে অন্য জায়গায় নিয়ে অপারেশন করান।’ হতবিহ্বল সেলিনার স্বামী আব্দুল মজিদের তখন দিশাহারা অবস্থা! পেট কাটার পর বলছে অপারেশন করা যাবে না! এও হয় পৃথিবীর কোথাও? এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া আচরণের শিকার হতে হয় এই প্রতিবেদককে। সম্প্রতি এই হাসপাতালটিরও কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দফায় দফায় অভিযান ॥ নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টক সেন্টার বন্ধে প্রথম ২০২২ সালের ২৬ মে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনদিনে দেশজুড়ে ৫৩৮টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতেই বন্ধ হয় ১৬৪টি। দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮৫০টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। এই অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় গত ২৯ আগস্ট। বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীরই ২০টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর বলেন, প্রতারণা বন্ধে নানা উদ্যোগ চলমান। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান ও সাইন বোর্ডে লাইসেন্স নম্বর লেখা বাধ্যতামূলক করা সেই উদ্যোগেরই অংশ। তিনি বলেন, এর আগে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে তিনদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার যাতে গড়ে না ওঠে, সেজন্য অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক সড়কেই শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ॥ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটট ও হাসপাতালসহ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে রয়েছে ১০-১৫টি সরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে শ্যামলী স্কয়ার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তায় গড়ে উঠেছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। এসবের বেশিরভাগেরই নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন। সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে এনে ফায়দা লাভ করাই এসব হাসপাতালের মূল কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাবর রোড, খিলজি রোড, টিবি হাসপাতাল রোড ঘিরে এসব হাসপাতালের রমরমা ব্যবসা চলছে। আধা কিলোমিটার রাস্তায় বেবি কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, অ্যানালাইসিস ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, আশিক মাল্টি স্পেশালাইজড, সিগমা মেডিক্যাল, মনমিতা মানসিক হাসপাতাল, শেফা হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম, এলিট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, চেস্ট কেয়ার, শিশু নিরাময়, মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, প্লাজমা মেডিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ক্লিনিক, আল মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল, নিউ ওয়েল কেয়ার হাসপাতাল, জয়ীতা মেডি ল্যাব, জনসেবা নার্সিং হোম, মুন ডায়াগনস্টিকসহ অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শ’ শ’ রোগী আর দালালে গিজগিজ করে পুরো এলাকা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ এই এলাকায় সরকারি হাসপাতালগুলো ঘিরে দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করেছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। শুধু এই দুটি হাসপাতালই নয়, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকায় এ রকম বৈধ-অবৈধ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থাকার কথাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরেও রয়েছে উল্লেখ করে ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আমরা এসব এলাকায় নিয়মিতই অভিযান চালাই। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান চালাতে সুবিধা হয়।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ॥ মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে এসব অবৈধ, অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছু কিছু হাসপাতাল বলছে, তারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, এখনো লাইসেন্স পায়নি। কিন্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এরা অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউ সেবা পর্যন্ত দিচ্ছে। সব জায়গাতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এগুলো সত্যি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তবে অবৈধ হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক রোগী দেখেন বা চিকিৎসা দেন, তাদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইমেরিটাস অধ্যাপক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, অবৈধ হাসপাতালে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কোনো চিকিৎসক যদি রোগী দেখেন, তাহলে বিএমডিসির উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
সমাধানের পথ ॥ অবৈধ হাসপাতালে অভিযানের বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার যে লোকবল আছে, তা দিয়ে এত বড় সেক্টর সামলানো সম্ভব না। এক সময় তো দেশে মাত্র কয়েকশ’ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছিল। এখন তো ছোট-বড় হিসাব করলে অর্ধলাখ হবে। এ জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও তদারকির জন্য প্রচুর লোকবল দরকার। সেই সঙ্গে যুযোপযোগী আইন লাগবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিদপ্তরকে দিতে হবে, তারা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালু করার শাস্তি দীর্ঘমেয়াদি কারাবরণ করতে হবে। দুই চার বছর জেল খেটে যেন বেরিয়ে আসতে না পারে। কারণ তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
তিনি বলেন, আইন সংশোধন, সক্ষমতা বৃদ্ধি আর প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে এই অধিদপ্তরকে চষে বেড়াতে হবে। ভালো গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। এর বাইরে আর কোনো সমাধান নেই।
অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে চালানো অভিযানের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, আমরা একটা আলোড়ন শুরু করেছি। এটি আগে নানা সময়ে হলেও এবার যে ঝাঁকুনি তৈরি হয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক। এই ধারা অবশ্যই চলতে থাকবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ॥ দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই অনিবন্ধিত তথা অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখন থেকে সরকারের নির্দিষ্ট শর্ত মেনে বেসরকারি মেডিক্যাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে হবে। এর কারণ, কিছু অসাধু মানুষ সরকারের কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য যত্রতত্র নামমাত্র হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নিয়মের বাইরে গিয়ে এগুলো আর চলতে পারবে না। এখনো ১২শ’টির ওপর প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিবন্ধন নাই। এদের কাছে ভালো চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান নাই। তাহলে এরা হাসপাতাল চালাচ্ছে কী দিয়ে? এরা রোগী পাচ্ছে কীভাবে? এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এ রকম অনিবন্ধিত সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র দ্রুত বন্ধ করা হবে। আর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালক (প্রশাসন) কর্তৃক স্বাক্ষরিত দশটি বিশেষ নির্দেশনাসহ একটি অফিস আদেশ করে দিয়েছি। এই অফিস আদেশ প্রত্যেকটি প্রাইভেট মেডিক্যাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অবশ্যই মেনে হাসপাতাল চালাতে হবে। এটির অমান্য হলেই নিবন্ধন বাতিলসহ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।