শফিকুল ইসলাম: দুর্নীতি, অনিয়ম, অনুপস্থিতি, সেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগের কারণে এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ঘন্টা ব্যাপি এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গুচ্ছগ্রাম থেকে এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজের লোকজন প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমানের অপসারণের দাবিতে মিছিল করে খেরুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এসে ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করে প্রধান শিক্ষকের নানা অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্বা মো. জামাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলী, মহর উদ্দিন, ফারুক মিয়া, ওমর দেওয়ানিসহ অনেকই বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, খেরুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এসবের অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এক মাসে বিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩ দিন উপস্থিত থাকলেও বাকি ২৭ দিন অনুপস্থিত থাকেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সহকারি শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমান বলে অভিযোগ তুলেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমান সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বরাদ্দের টাকা কাজ না করে তিনি আত্মসাত করেন এবং বিদ্যালয়ের সোলার, ব্যাটারি, পানির ট্যাং, পানির পাম্প (মটর), শিক্ষার্থীদের বসা ব্রেঞ্চসহ নানা আসবাবপত্র তিনি নিজ বাড়িতে ব্যবহার করছেন এবং কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেন। এসব অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায় মানববন্ধনে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবুবক্কর সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক স্যার দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ প্রধান শিক্ষক সকলকে ম্যানেজ করে চলেন এবং ক্ষমতাবানদের সঙ্গে সঙ্কতা থাকায় এসব করছেন বলে জানান। তারা আরও বলেন, এর আগে বিদ্যালয়ের এক মহিলা শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন ধরনেও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ওই ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে বদলি করেন কর্তৃপক্ষ। এখনও প্রধান শিক্ষক স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মোনছুর আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরও বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করেন। সরকারের কাছে আকুল আবেদন প্রধান শিক্ষককে কঠোর শাস্তির মাধ্যমে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দিলে লেখাপড়াসহ নানা সমস্যা সমাধান হবে। তা না হলে দিনদিন আরও খারাপ পর্যায়ে যাবে বলে জানান।
অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মসিহুর রহমান অস্বীকার করে বলেন, আমার সহকারি তিনজন শিক্ষকের কারসাজিতে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, আমি কোন শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করিনি। তিনি (শিক্ষিকা) আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় পরে কর্তৃপক্ষ তাকে (শিক্ষিকা) কে সরিয়ে দিয়েছে। আর বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করিনি। তবে আসবাবপত্রের বিষয় জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহকে একাধীকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মানববন্ধনের বিষয় শুনেছি, এঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।