শফিকুল ইসলাম : সারা দিন রৌমারীর চর নতুনবন্দর স্থলবন্দরে পাথর ভাঙ্গা কাজ করে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরেন মমতাজ বেগম (৪৮)। এমন হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনির পর দিন শেষে হাতে পান মাত্র ৩’শ টাকা। তা দিয়েই দিন চলে যায় তাদের।
ঘরে বিবাহ উপযুক্ত তিন তিনটি কন্যা সন্তান। অর্থের অভাবে তাদের বেশি দুর লেখাপড়া করাতে পারেননি। এখন বিবাহের বয়স পেড়িয়ে গেলেও সন্তানদের বিবাহ দিতে না পেরে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ব্যাপারীপাড়া গ্রামের মমতাজ বেগম।
বিয়ে হয়েছিল ঢাকা জেলায়। প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন স্বামী আবু তালেব মিয়া। স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় বাবার বাড়িতে চলে আসেন মমতাজ বেগম। বাপ-ভাইদের সহায়তায় কোন মতে একটি দো-চালা ঘরে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। বর্তমানে সংসারের অভাব অনটন লেগেই আছে। এত সব দুঃখ দুর্দশায় পাশে দাড়ায়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি কোন সংস্থা। ভারতের পাথর আমদানী বন্ধ থাকায় সাড়ে ৬ মাস থেকে চর নতুনবন্দর স্থলবন্দরে কাজ করতে পারেনি মমতাজ। ফলে খেয়ে না খেয়ে ধারদেনা করে কোনমতে চলছে চার সদস্যের একটি সংসার। বড় মেয়ে আকতারা খাতুন। বয়স তার (২১), মেজো মেয়ে রোকছানা খাতুন তার বয়স চলছে (১৮) বছর ও ছোট মেয়ে জাহানারা খাতুন, তার বয়স (১৫) বছর। শিক্ষা অর্জনে সুযোগ করে দেয়নি সচেতন মহল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। অভাব হলেও লাজ-লজ্জায় পাশের কোন বাড়িতে যেতে পারে না একমুঠো খাবারের জন্য। সমাজের বিত্তশালী কোন ব্যক্তি মানবতায় এগিয়ে আসেনি। শুধু মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় তাদের দিন। সরকারি সহায়তা হিসেবে ভিজিডি, কর্মসৃজন কর্মসূচী (মঙ্গা) ও কম্বলসহ কোন তালিকায় নাম উঠেনি মমতাজের। বাবার সম্পত্তি থেকে প্রায় ১২ শতক জমির অংশ পান তিনি। সেই জমিতে ছোট একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সেটাও ভেঙ্গে জড়াজিন্ন অবস্থা।
দরিদ্র অসহায় পরিবারের বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পরে তাৎক্ষণিক ভাবে সিএসডিকে’র নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ মাস্টার শীতবস্ত্র ও চাউলসহ বেশকিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে ওই পরিবারের পাশে দাড়ান।
তিনকন্যা সন্তানের মা মমতাজ বেগম কান্না জিড়িত কন্ঠে জানান, জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের একটি ঘরের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছি। কিন্ত আমাকে একটি ঘরের নাম দেওয়া হয়নি। একটি কম্বলের জন্য রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এর কাছে পরপর দুইদিন গেলেও আমাকে ফিরিয়ে দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, ওই অসহায় মমতাজ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কম্বল না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, যে কয়টি কম্বল পেয়েছি তা বিতরণ করা হয়েছে।
রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপাতত কোন বরাদ্দ না থাকায় কিছু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।