সেবা ডেস্ক : পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ দিতে জেলা প্রশাসকদের মতো ফিটলিস্ট প্রণয়ন করবে সরকার। এরকম নীতিমালা না থাকার সুযোগে অতীতে অনেকেই বিশেষ তদবির বা ব্যক্তি সম্পর্কের মাধ্যমে জেলায় এসপি নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক যোগ্য ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। এই অবস্থার নিরসনেই ফিটলিস্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফিটলিস্ট অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে উপসচিবদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগে কেন একই নিয়ম অনুসরণ করা হবে না তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চুলচেরা আলোচনা হয়েছে। এরপরই নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে ফিটলিস্টের মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন জেলায় এসপি নিয়োগ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের মতে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে যোগ্যদের বাছাই করতে যেমনভাবে ফিটলিস্ট করা হয়, একইভাবে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগের ক্ষেত্রেও ফিটলিস্ট হবে।
এক্ষেত্রে গোয়েন্দা প্রতিবেদন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য-উপাত্তকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রশাসন ক্যাডারের মতো ফিটলিস্ট থেকেই মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রশাসনের ফিটলিস্টে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এরপর যোগ্য কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা শেষে ফিটলিস্টের মাধ্যমে এসপি পদায়নের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর জননিরাপত্তা বিভাগ শিগগির এ ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ বলেন, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির এক বছর পর জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট প্রণয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের রেকর্ড এবং পুরো চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। একই প্রক্রিয়ায় ফিটলিস্টের মাধ্যমে পুলিশ সুপার নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ফিটলিস্টের মাধ্যমে জেলায় এসপি নিয়োগের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। নীতিমালায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) হওয়ার প্রথম ধাপ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান। এটা না হতে পারলে কোনোভাবেই কেউ ডিসি হতে পারবেন না। প্রথমে এসি ল্যান্ড, তারপর পর্যায়ক্রমে সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ইউএনও এবং এডিসি হতে হবে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)-এর মাধ্যমে উপসচিব হলে সরকার ওই কর্মকর্তাকে ডিসি নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট প্রস্তুত করবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে মাঠ প্রশাসনে অন্তত ৩ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পরবর্তীতে ফিটলিস্ট তৈরির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে।
সচিবদের নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে দুটি বোর্ড তার উপস্থিত বক্তৃতা, কোনো বিষয়ের ওপর জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব, ভূমি বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা, মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিবেচনা করে। যারা এই বোর্ডে ভালো করেন, তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি। এরপর ২৫ থেকে ৩০ জনের ফিটলিস্ট তৈরি হলে গোয়েন্দা ভেরিফিকেশন হয়। সেখান থেকে ইতিবাচক ফল এলে সংশ্লিষ্টদের ডিসি পদায়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত যুক্ত করে নতুন নীতিমালা জারি করে সদ্যবিদায়ি সরকার। ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীগণের পদায়ন নীতিমালা, ২০২২’ পরিপত্র আকারে জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে ‘বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নীতিমালা, ২০১৫’ এবং ‘জেলা প্রশাসক, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং মহানগর হাকিম হিসেবে কর্মকর্তা নির্বাচন বা পদায়নের নীতিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত ২০১০, ২০১৩, ২০১৫)’ বাতিল করা হয়। নীতিমালায় আরও বলা হয়, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়ন করা হবে। বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়নের জন্য জেলা প্রশাসক পদে কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক পদের ফিটলিস্ট প্রণয়নে আগের মতোই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি থাকবে। নিজ জেলা বা স্বামী বা স্ত্রীর জেলায় জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন করা যাবে না বলে এই নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগে অতীতে কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রম হয়েছে। শ্বশুরবাড়ি এলাকায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে পদায়নের অভিযোগ উঠেছে। এসপি ফিটলিস্ট তৈরির নতুন নীতিমালায় এসব বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। একাধিক সূত্র জানায়, এসপি ফিটলিস্ট প্রণয়নের নীতিমালা হবে ডিসি ফিটলিস্টের নীতিমালার আদলেই।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।