আবদুল জলিল : হেমন্তে যমুনা তার নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর বুকে জেগে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচর।পানি কমে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে মাছের প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীন সেই অভয়াশ্রমে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ গুল্লীজাল। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য অভায়াশ্রমকে স্থানীয়ভাবে কোল বা কোলা” বলা হয়। এসব কোলার আশপাশের দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাব্যাপী যমুনায় স্থানীয়ভাবে বেড়া (বাধ) দিয়ে গুটিকয়েক সুবিধাবাদী মানুষ মাছ শিকার করে যাচ্ছেন। গত পনেরো দিন যাবৎ একইভাবে যমুনার কাজিপুর ইউনিয়নের সিংড়াবাড়ী থেকে খুদবান্দি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় এই কায়দায় মাছ শিকার করছেন ১৫ থেকে ২৯ জন জেলে। কোল কাছাড়ের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বেড়া বা বাধ দিয়ে তিনশ গজ লম্বা জাল দিয়ে মাছকে টেনে কাছে নিয়ে এসে ধরা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এবং মৎস্যজীবী সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করে চলছে মাছ নিধনযজ্ঞ। উপজেলা মৎস্য অফিস এবং উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়নি।
শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদীর পানি কমে গেছে। কাজিপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠছে মাছের অভয়াশ্রম। এসব অভয়াশ্রমে এসময় নানা প্রজাতির মাছ জড় হয়। স্থানীয় বয়ষ্ক একাধিক মুরব্বী জানিয়েছেন মাছের কোল বা কোলায় আইড়, বাঘাড়, বোয়াল, রুই, পাঙ্গাস জাতীয় মাছ থাকে। গত সোমবার দুপুরে উপজেলার সিংড়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমনি একটি অভয়াশ্রমের পাশে যমুনার একটি শাখায় বেড়া বা বাধ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। খুদবান্ধি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শামীম সেখানে গুল্লীজাল ও বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। ওই জালের মালিক বরইতলী গ্রামের বল্টুরাম হালদার জানান চুক্তির মাধ্যমে আমার জাল নামিয়েছেন শামীম।
এদিকে মাছ শিকারের বৈধ কাগজপত্র আছে দাবী করেন শামীম। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি আরও জানান প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাছ শিকার করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানিয়েছেন ওই কোলে প্রতি রাতে তিরিশ থেকে ৫০ মণ, আইড়, বাঘাইড়, রিটা, বোয়াল, রুই, চিতলসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়ছে। তাদের দাবী মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম মন্টু ও সম্পাদক প্রভাত হালদারের ছত্রছায়ায় এভাবে মাছ শিকার চলছে। সভাপতি শরিফুল ইসলাম মন্টু জানান, গুল্লী জালের বৈধতা আছে। তবে ওই জাল আমি আজকে তুলে নিয়ে যাবো। আর সাধারণ সম্পাদক প্রভাতচন্দ্র হালদার জানান, তিনযুগ আগে খোলামেলা জলমহাল ইজারা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই থেকে আমরা স্থানীয়দের ম্যানেজ করে এই কায়দায় মাছ শিকা এই মাছগুলিকে পুরোপুরি নিমর্ুূল করলে পরবর্তীতে মাছের প্রজননে বিঘœ ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন কাজিপুরের আমিনা মনসুর ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক দিবাকর সরকার। তিনি বলেন, এমনিট বারবার ঘটতে থাকলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে একসময়।
কাজিপুর উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মৎস্য কর্মকর্তা হাসান মাহমুদুল হক জানান, গুল্লীজাল দিয়ে মাছ ধরা অবৈধ। দ্রুতই ওই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার জানান, গুল্লীজালের ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠিয়ে অবগত করা হয়েছে। আমরাও খোঁজ নিচ্ছি।
কাজিপুরে বছরে মাছের চাহিদা ৪ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন। অধিকাংশ জোগান আসে যমুনা নদী থেকেই।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।