মাসুদুর রহমান : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে থানায় অভিযোগের পরদিন আলেয়া (৫০) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পুঠিয়ারপাড় এলাকার মরহুম চান মিয়ার ছেলে প্রবাসী শফিকুল ইসলাম (৫৫) এর স্ত্রী। নিহত আলেয়া তিন সন্তানের জননী । তার বড় মেয়ে সুপ্তি (২৫) ও ছেলে আপন (১০) এবং ৭ বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে রয়েছে। তবে মায়ের মৃত্যুতে বাবা শফিকুল ইসলাম ও চাচা শাহিদুল ইসলামকে দায়ী করেছে নিহতের বড় মেয়ে সুপ্তি ।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় , বিয়ের পর থেকেই আলেয়া(৫০) তার স্বামীর বাড়ীতে স্বামী শফিকুল ইসলাম ও দেবর শাহিদুল ইসলাম এর অত্যাচার, শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন সহ্য করে আসছিল। শফিকুল ইসলাম ১ম স্ত্রীকে রেখেই কুষ্টিয়ায় আরেকটি বিবাহ করে। বিবাহের পর থেকেই স্ত্রী সন্তানদের খোজ খবর নিতেন না প্রবাসী শফিকুল। প্রতিনিয়ত দেবরের নির্যাতনে স্বীকার অসুস্থ হয়ে পড়ে আলেয়া। সেই সাথে শাহিদুল তার ভাতিজি ও ভাতিজাদের বিভিন্ন সময় রাতে হুমকি দিয়ে আলেয়া সহ সবাইকে বাড়ী থেকে বের করে দিতো। এরই প্রেক্ষিতে অত্যাচার, নির্যাতন প্রতিকার চেয়ে রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিহত আলেয়া বিচার চেয়ে সরিষাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। রাতে বাড়ীতে যাওয়ার পরেই আলেয়া রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় সরিষাবড়ী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর দুপুরেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আলেয়া। তার মৃত্যুর পরেই দেবর শফিকুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়েছেন । মেয়ের মারা গেছে শুনে মেয়েকে দেখতে গেলে আলেয়ার বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হয় । সন্ধ্যায় সংবাদ পেযে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর ও ওসি তদন্ত ফয়সাল আহমেদসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন । দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর আলেয়ার বাবা ও ছেলে মেয়ে আসলে কয়েকজনে তাদের বলে , লাশ জামালপুর নিতে দেওয়া যাবে না । লাশ কাটাকাটি করবে । পরে রাত সাড়ে নয়টায় তাদের বিচারের আশ্বাস প্রদান করলে তারা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের সম্মতি দিয়ে রাতেই আলেয়ার লাশ তারাকান্দি বাবার বাড়ীতে দাফন করা হয় । নিহতের মেয়ে সুপ্তি জানান, আমার আব্বা আরেক বিয়ে করেছে । আরেক বিয়ের পর থেকেই আমাদের কোন খোজ খবর নেয় না । সতীন মা যেটা বলে বাবা ও চাচা সেটাই করে । আমার চাচা মাঝে মধ্যেই আম্মা ও ভাই বোন দের রাতে বাড়ী থেকে বের করে দিতো। শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করত । তাদের অত্যাচারে আম্মা অসুস্থ হয়। আমার বাবার কি টাকা পয়সা কম আছে কিন্তু চিকিৎসা করাই না । রবিবার আম্মা থানায় অভিযোগ দিয়েছে । আম্মা আগেও কয়েকবার অসুস্থ হয়েছে । অবহেলা ও চিকিৎসার অভাবে আম্মা মারা গেল । তিনি আরো বলেন , আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা ও চাচা শহিদুল ইসলাম দায়ী । তাদের অত্যাচার ও অমানুষিক নির্যাতনের কারণেই তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে । আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই। এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, রোগীরা সাথে যারা এসেছিল তারা বলেছিল আলেয়ার ডায়রিয়া হয়েছে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে আলেয়া মারা গেছে। পরে শুনলাম পরিবারে নাকি ঝামেলা আছে। থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছে আলেয়া । এটা খোজ খবর নেওয়া দরকার। অভিযোগের বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করে থানার এসআই হান্নান জানান, রবিবার বিকেলে একটি অভিযোগ ডিউটি অফিসারের রুমে দিয়ে গিয়েছিল। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছে। এ বিষয়ে সরিষাবাড়ীর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানান, একটি পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর আলেয়া মৃত্যুও ্আগে যে অভিযোগটি থানায় দিয়েছিল সেটার ব্যবস্থা আমরা নিব ।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।