নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে সরকারি হাসপাতালের ওষুধ গোপনে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে ব্যবহার করে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফাতেমা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোরহান উদ্দিন শিবলুর বিরুদ্ধে।
তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরি-সঞ্চালন বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তার বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও রক্ত নিয়ে গোপনে নিজের ক্লিনিকে সাপ্লাই করে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণা করতে নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত করে তুলেছেন। স্ত্রী-সন্তান গোপন রেখে ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক বিয়ে করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। বোরহান উদ্দিন থেকে বোরহান কবীর ফরহাদ এবং ফেসবুক আইডির নাম শিবলু ফরহাদ। সরকারি হাসপাতালে চাকরির ফাঁকে বগুড়া, নন্দীগ্রাম, নওগাঁ ও বিভিন্ন এলাকায় ক্লিনিকসহ নামে-বেনামে গড়েছেন ৭টি প্রতিষ্ঠান। সেখানকার কর্মচারিদের কাছে ওই ব্যক্তি শিবলু নামে পরিচিত। কর্মচারিরা তাকে এমডি হিসেবেই জানে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বোরহান উদ্দিন শিবলু বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেটের সম্মুখে হেল্প প্লাস নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নওগাঁয় কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালাচ্ছেন। বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় বগুড়া কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার, শহরের অভিজাত মমইন ইকো পার্কে কুয়াকাটা রেস্টুরেন্ট, নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে ছমির উদ্দিন মার্কেটে ফাতেমা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্নিচার ব্যবসা, ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন স’মিল এলাকায় রয়েছে ফার্নিচার তৈরীর কারখানা। ফাতেমা ক্লিনিকের বিভিন্ন কাগজপত্রে পরিচালক হিসেবে প্রথম স্ত্রী দিনা পারভীনের নাম দেখা যায়। তবে তার স্ত্রী ক্লিনিকে বসেন না। শজিমেক হাসপাতালে চাকরির ফাঁকে ওই ক্লিনিকে নিজেই বসেন বোরহান উদ্দিন কবীর ওরফে শিবলু ফরহাদ। তার ক্লিনিকে সরকারি ওষুধ রাখার ভিডিও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে চাকরির সুযোগে ওই ব্যক্তি সরকারি ওষুধ ও রক্ত গোপনে নিজের ক্লিনিকে সাপ্লাই এবং ব্যবহার করে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেন। শজিমেক হাসপাতালে বোরহান উদ্দিনের স্থলে মাঝেমধেই নাইটে ডিউটি করেন অন্য ব্যক্তি। হাসপাতালে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে দুই স্ত্রী ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সময় দেন শিবলু। তিনি ব্যক্তি একজন হলেও বসবাস করেন তিন জায়গায়। তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস আর মা ফাতেমা বেগম মারা গেছেন। রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার ২৫ নং ওয়ার্ডের কাজলা এলাকা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম স্টাফ কোয়ার্টার এবং বগুড়া সদরের দক্ষিণ শৈলালপাড়া এলাকায় বসবাস করেন বোরহান উদ্দিন। নন্দীগ্রামে স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করলেও সেখানে কৌশল করেছেন! অন্য ব্যক্তির নামে স্টাফ কোয়ার্টারের ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন। ওই ব্যক্তি প্রথম স্ত্রী-সন্তান গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকার দীন মোহাম্মদ পালুর কন্যা দিনা পারভীনের সঙ্গে ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর একলাখ টাকা দেনমোহরে প্রথম বিয়ে হয়। সেই সংসারে আফিয়া নামের ৮ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এরমাঝেই টেকনোলজিস্ট রুবাইয়া খাতুনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই নারীর সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন। তবে দুটি কাবিননামাতে বোরহান উদ্দিন প্রথম বিবাহ উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রুবাইয়া খাতুন বগুড়া সদরের দক্ষিণ শৈলালপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম খন্দকারের কন্যা।
এসব ব্যাপারে মন্তব্য নিতে বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পরে কথা হবে জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ওই ব্যক্তি কিভাবে স্টাফ কোয়ার্টোরে বসবাস করছে, সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকারি হাসপাতালের ওষুধ-রক্ত ব্যক্তিগত ক্লিনিকে ব্যবহার ও অপচিকিৎসা প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মাদ শফিউল আজম বলেন, প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।