শফিকুল ইসলাম : রৌমারী উপজেলায় গত কয়েকদিন থেকে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে তীব্র ¯্রােতে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনে ভয়াবহ রুপ ধারন করছে।
উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় দিনে রাতে তীব্র ¯্রােতের কারনে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২০টি বশতবাড়ি ও কৃষি জমি নদের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪০টি পরিবার। ওই পরিবারগুলো বর্তমানে অন্য কোন এলাকায় স্থান না পেয়ে নদের কিনারের পাশেই ছাপড়া ঘর উঠিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদের ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর পাশে দাড়ায়নি সরকারি কোন কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধিগণ। পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রাম ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া যায়। অপর দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ও গেন্দার আলগা, রৌমারী উপজেলার শেখের বাজার, খেদাইমারী, চর খেদাইমারী, ফলুয়ার চর, পালেরচর, কান্দাপাড়া, দিঘলাপাড়া ও ধনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রাম এলাকায় একই ভাবে বসতবাড়ি ও কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। এতে প্রতি বছর শতশত পরিবার ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনায় কেউ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। ফলে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করেন এবং অনেক পরিবারকে জমিসহ ঘর দেন। এদিকে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সংখ্যা কমে আসলেও নদী ভাঙ্গনের কারনে নতুন করে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছেই।
ঘুঘুমারী গ্রামের জবেদ আলী বলেন, কয়েকদিনের মাথায় আমার বাড়িটি নদীতে ভেঙ্গে যায়। কৃষি জমি যা ছিল সব নদীতে গেছে। আমি সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। এর আগেও নদীতে তিনবার বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। আমরা রিলিফ চাইনা সরকার যদি নদী ভাঙ্গনরোধ করে দেয় তাও কোন মতো বাঁচতে পারবো।
একই গ্রামের সকিনা খাতুন বলেন, আমার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নিজের জায়গা না থাকায় নদীর পাশেই ছাপড়া তোলে কোন মতো ঠাই করে আছি। সরকারের কাছে দাবী নদীটা যেন বানদি দেয়।
বন্দবেড় ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুইমাস আগে পানি সম্পদমন্ত্রী ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নদী ভাঙ্গন এলাকা দেখে গেছেন। কিন্ত এখন পর্যন্ত কার্যকরি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে পথে বসেছে। তাদের পূনর্বাসন করা না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব বিপদে পড়বে।
চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান একেএইচএম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এখনই নদী ভাঙ্গন রোধকরা না হলে ঘুঘুমারী গ্রামটি সম্পন্ন নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ওই পরিবারগুলো আত্মীয় স্বজন ও নদীর পাশেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তাদের পূণর্বাসন করা জরুরী। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দিয়ে ও গ্রামবাসির সহযোগিতায় আপাতত বাঁশের বান্ডাল দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করা চেষ্টা করবো। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ভাঙ্গন এলাকা নিয়ে সুনজরে রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসন খান জানান, জরুরী ভাবে খোজখবর নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ভাঙ্গন এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে পরিদর্শনের জন্য। সেখানে কি ব্যবস্থা নিলে নদী ভাঙ্গনরোধ করা যাবে, আমরা সেটাই করবো। আর অন্যান্য এলাকায় নদী ভাঙ্গনরোধে কাজ চলমান রয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।