নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা নাসিমা আক্তার গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। একই গার্মেন্টেসে তার সঙ্গে কাজ করতেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী নূর বানু।
একসময় দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অসচ্ছল নূর বানুর তৃতীয় সন্তান ৪০ দিনের শিশুপুত্র মাহিমকে বান্ধবী নাসিমার শূণ্য কোলে তুলে দিয়েছিল। ১৪ মাস ওই শিশুকে লালন পালন করেন নাসিমা।
অবশেষে সেই সন্তানের টানে গত বুধবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামে ছুটে আসেন নূর বানু। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে ওইদিন রাতেই সেই শিশুকে মায়ের কোলে তুলে দেয় পুলিশ। মাহিমকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পরেন পালক মা নাসিমা। এমন সময় শিশুটিও কেঁদে ওঠে। বান্ধবী নাসিমাকে জড়িয়ে ধরে নূরবানু কান্না শুরু করলে থানায় উপস্থিত সকলেই আবেগাপ্লুত হন।
জানা গেছে, বান্ধবী নূর বানুর কাছ থেকে ৪০ দিনের শিশুকে মৌখিক দত্তক নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন নাসিমা। ১৪ মাস পর সেই সন্তানকে ফিরে পেতে নন্দীগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ চাঁদখানা সারোভাসা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী নূর বানু। পরে রাত ৮টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের সরিষাবাদ বাংলাবাজার গ্রামে শিশুটির পালক মা নাসিমার কাছে যান থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান ও নারী শিশু হেল্প ডেস্ক অফিসার ফরিদা পারভীন। শিশু সহ তার পালক মা নাসিমাকে থানায় আনা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেয় পুলিশ।
এসময় শিশুটির পালক মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমি নিঃসন্তান ছিলাম। বান্ধবীর পুত্রকে পেয়ে শূন্য বুকটা ভরে গিয়েছিল। ৪০ দিনের শিশুকে নিয়ে ১৪ মাস লালন পালন করেছি। মাহিমকে ফিরিয়ে দিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছে বলেই কান্নায় ভেঙে পরেন ওই নারী।
শিশুটির মা নূর বানু জানায়, তিনি গাজীপুরে গার্মেন্টেসে কাজ করেন এবং তার স্বামী রিকশা চালায়। অভাবের সংসারে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গার্মেন্টেসে কাজ করার সুবাদে তার সঙ্গে নন্দীগ্রামের নাসিমার বান্ধবী সম্পর্ক গড়ে উঠে। নাসিমার কোন সন্তান নেই। নূর বানুর সংসারে আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে তাকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগিতা করতো নাসিমা। নূর বানুর তৃতীয় সন্তান মাহিম গর্ভকালেও সহযোগিতা করে বান্ধবী। ওই শিশু জন্মের সময় ক্লিনিক ও ঔষুধের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে নাসিমা। শিশু মাহিম জন্মের ৪০ দিন পর অসুস্থ হলেও নূর বানু দম্পতি চিকিৎসা করাতে পারছিলো না। গার্মেন্টসে চাকরির পাশাপাশি টাকা অভাবে নবজাতকের দেখভাল করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। নবজাতককে নিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে যায় নূর বানু। সেখানেও আর্থিক সমস্যায় শিশুর চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয় ওই দম্পতি। পরে চিকিৎসার স্বার্থে এবং শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে পরিবারের সম্মতিক্রমে ওই শিশুকে বান্ধবী নাসিমার নিকট মৌখিকভাবে দত্তক দেয় নূর বানু। কিন্তু ১৪ মাস পর বাধ সাধলেন স্বামী মোফাজ্জল। না বুঝে অভাবের সংসারে ভুল করে শিশু মাহিমকে মৌখিকভাবে দত্তক দিয়ে নুর বানু দম্পত্তি অনুতপ্ত হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পরে।
নন্দীগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক বিকাশ চক্রবর্ত্তী জানান, এটি মামলা হওয়ার মতো ঘটনা নয়, বিষয়টি মানবিক ছিল। দুই বান্ধবীর মানবিক বন্ধন। শিশুর প্রতি মা স্নেহের দুই বান্ধবীর ভালোবাসা দেখে থানায় উপস্থিত সকলেই আবেগাপ্লুত হন। শিশু মাহিমকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় দুই বান্ধবী নিজেদের জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলে শিশুটিও কেঁদে ওঠে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।