শফিকুল ইসলাম : ঘুষ ছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনেন না কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. শহিদুল্লাহ। এই অভিযোগটি করেছেন কার্ডধারী ভুক্তভোগি কৃষকরা। এনিয়ে কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ২৫৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ৭৭১টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ৬০৯ টন। তবে একজন কৃষক (৭৫ মণ) তিন টন করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ধান সংগ্রহ শুরু হয় চলতি বছরের ৭ মে। শেষ হবে ৩১ আগস্ট মাস পর্যন্ত।
কার্ডধারী ভুক্তভোগি কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদামে টনপ্রতি ধান বিক্রি করতে একজন কৃষককে ২ হাজার ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া মণপ্রতি অতিরিক্ত হিসেবে দুই কেজি করে ধানের দাম ৬০ টাকা দিতে হয় গুদাম কর্মকর্তা শহিদুল্লাহকে। এতে একজন কৃষকের নামে তিন টন ধান কিনতে ৬হাজার ৬০০টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন ওই গুদামগুদাম কর্মকর্তা। এছাড়াও গুদামে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর যোগসাজশে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কিনছেন তিনি। যাদের কাছে ঘুষ নিতে পারছেন শুধু তাদেরেই ধান গুদামে ক্রয় করছেন ওই কর্মকর্তা।
কৃষকরা আরও অভিযোগ করেন, প্রান্তিক কৃষকরা নমুনা নিয়ে খাদ্যগুদামে আর্দ্রতা পরীক্ষা করাতে গেলে ধানের মান ভালো নয়, এমন অজুহাতে তাদের ধান ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা গুদামে সরবরাহ করছেন স্থানীয় একটি চক্র। গুদামে কৃষকের ধান সংগ্রহের মান যাচাইয়ের নামে করা হয় টালবাহানা ও হয়রানি।
লটারীতে না উঠা কার্ডধারী কৃষক ও যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তাঁর নামের তিন টন ধান খাদ্যগুদামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু ধানের মান ভাল না অজুহাতে ফিরিয়ে দেন গুদাম কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ। অথচ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টনে টনে ধান ক্রয় করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, একমাস থেকে ঘুরেও নিজের নামে ৩টন ধান ও তাঁর ছেলে নাজমুল ইসলামের নামে ৩টন ধান গুদামে বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
নিজের নামের তিন টন ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করেন কার্ডধারী কৃষক শফিউর রহমান। তিনি বলেন, তিন টন ধান গুদামে বিক্রি করতে ২ হাজার ১০০টাকা ঘুষ দিতে হয় গুদাম কর্মকর্তাকে। এর জায়গায় এক হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন তিনি। এ কারণে তাঁর পরিবারের আরও তিন জনের নামের ৯টন ধান গুদামে বিক্রি করতে পারেননি। তিনি জানান, বস্তা খালি নেই, গুদামে জায়গা নেই এই বলে বিভিন্ন টালবাহনা ও হয়রানি করেন ওই কর্মকর্তা।
লটারীতে নাম উঠা আরেক কৃষক রিফুল মিয়া বলেন, আমার নামের ধান গুদামে বিক্রি করতে দীর্ঘদিন থেকে ঘুরছি। কিন্তু গুদাম কর্মকর্তা আজ নেবেন, কাল নেবেন, খালি বস্তা (ছালা) নেই বলে অজুহাত ও হয়রানি করেন। তিনি বলেন, গুদাম কর্মকর্তার কাছে কৃষকরা কোনো মানুষ না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে সরকারি গুদামে। এতে টনপ্রতি ৭০০ টাকা ও মণপ্রতি অতিরিক্ত দুই কেজি ধানের দাম ৬০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয় গুদাম কর্মকর্তা শহিদুল্লাহকে। এই ঘুষের টাকা না দিলে খাদ্যগুদামে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। সরকারি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার কাছে কৃষকরা অসহায়। তাঁর দাবি, তাঁর নামের তিন টন ধান বিক্রি করতে পারলেও পরিবারের আরও দু’জনের নামের ধান বিক্রি করতে পারেননি। টাকা ঘুষ দিলে ধান নেন, আর ঘুষ না দিলে ফিরিয়ে দেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রৌমারী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. শহিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়। কৃষকের সঙ্গে টালবাহনা ও হয়রানি বিষয়ে তিনি বলেন, গুদামে জায়গা খালি নেই। এ কারণে কৃষকের ধান নেওয়া যাচ্ছে না।
রৌমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বসুনিয়ার দাবি, তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে ধান কেনার কোনো সুযোগ নেই। তবে এবিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।