মাসুদুর রহমান : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়(স্কুল এন্ড কলেজ) এর অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শহীদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের কার্যালয় তালা দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
সম্প্রতি তার অপসারণ দাবীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অধ্যক্ষ শহীদুর রহমানের কর্মকান্ডের তদন্তের দাবী জানিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের সু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
১৮ জুন রবিবার বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই মাসে ৫ম সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। সরকারী বিধিমালা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে এডহক কমিটির যোগশাজোশে তিনি দায়িত্ব নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। খোজ নিয়ে জানা যায়, শহীদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের লক্ষ্যে নিয়োগ,পদোন্নতি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর ও অর্থ ব্যয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি সেই প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে অতঃপর বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অদৃশ্য শক্তির বলে ৫ম সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুমতি দেন। তবুও অত্র বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকগণ অনিয়মকেই নিয়ম হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ এ অধ্যক্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। ২০২৩ সালের ১৬ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: তানভীর হোসেনের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে সাময়িকভাবে আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার,ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবী করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা ২৪ এপ্রিল সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অধ্যক্ষ শহীদুর রহমান এর বিভিন্ন অনিয়ম এর চিত্র তুলে ধরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের কোন ব্যবস্থা না দেখে ১৪ জুন শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবীতে অধ্যক্ষ শহীদুর রহমানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান,দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকেই অধ্যক্ষ শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। সরকারী করণের কাজে অযথা কালক্ষেপন করে যাচ্ছেন তিনি। অধ্যক্ষ শুন্য পদের তথ্য মন্ত্রণালয় চাওয়া সত্ত্বেও তিনি তথ্য প্রদান না করে অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকার পায়তারা করে আসছে। ইংরেজী বিভাগের এক শিক্ষকের ভুল তথ্য দিয়ে তাকে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক বানিয়েছেন।
এবিষয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিধি মোতাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি সরকারী করণের পর শিক্ষকদের আত্তীকরণের কাজে তিনি অযথা কালক্ষেপণ করে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ শুন্যপদের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া সত্ত্বেও তা না দিয়ে নিজে অবৈধভাবে পদে বহাল থাকার পায়তারা করছেন। এমনকি স্বেচ্ছাচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে লক্ষলক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেন। অনিয়ম ও বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর কথা বলা হলে তিনি বলেন,তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে ।
এদিকে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে একদিন গিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে কথা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক জানান,প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত চলছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।