[১৭৮] দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমবে

S M Ashraful Azom
0

: মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে আসছে বাজেটে ১৩ ধরনের তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে শেখ হাসিনার সরকার। 

দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমবে



 এই কর প্রত্যাহারের ফলে অপরিশোধিত তেল, ডিজেল, জেট ফুয়েল, কেরোসিন ও বেস অয়েলসহ জ্বালানি পণ্যের দাম কমবে। বর্তমানে প্রধান প্রধান জ্বালানি তেল যেমন ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল ডিজেল এবং অকটেনের মূল্যের মধ্যে ৩৪ শতাংশ সরকারি কর ও শুল্ক আছে।


এরমধ্যে কাস্টমস শুল্ক ১০শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর দুই শতাংশ, আগাম কর পাঁচ শতাংশ। আগাম কর উঠে গেলে সার্বিক কর হার ২৯ শতাংশে নেমে আসবে। এদিকে সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা পেতে ন্যূনতম কর বাধ্যতামূলক করা হতে পারে আগামী বাজেটে। অর্থাৎ এই সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম এক থেকে দুই হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এ ছাড়া বাড়ানো হচ্ছে করমুক্ত আয়ের সীমা। 

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল নয় দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির এ হারকে ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতিজনিত মানুষের যে টানাপোড়েন, তা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।


কারণ, আমদানিনির্ভর পণ্যের উচ্চমূল্য, ডলারের বাড়তি দাম এবং শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। এসব সমস্যা যতদিন থাকবে, ততদিন উচ্চ মূল্যস্ফীতিজনিত চাপে থাকবেন দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ছয় শতাংশ। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা এবং পেট্রোল ১২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম কমলে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটাই সহজ হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সর্বস্তরের জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে সরকার জ্বালানি তেলের আগাম কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছেন, জ্বালানি তেলের ওপর আগাম কর কিংবা অন্য কোনো কর আরোপ করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আগের তুলনায় অনেক বেশি।


সরকার জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিলেও গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির জেরে দেশেও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক দিয়ে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার জনগণের কষ্ট লাঘব করতে বাজেট প্রণয়ন করে। জ্বালানি তেলের মূল্যের সঙ্গে যেহেতু সবকিছুর সরাসরি একটি প্রভাব রয়েছে, তাই এ খাতে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। আগাম কর প্রত্যাহার হলে দাম না কমলেও স্থিতিশীল থাকবে বলে জানান তিনি। যে ১৩টি পেট্রোলিয়াম পণ্য আগাম কর অব্যাহতি পাবে, সেগুলো হলো- পেট্রোলিয়াম তেল, অপরিশোধিত তেল, এইচবিওসি (হাই অকটেন ব্লেন্ডিং কম্পোনেন্ট) ধরনের মোটর গ্যাসোলিন, এভিয়েশন গ্যাসোলিনসহ অন্যান্য গ্যাসোলিন; জেট ফুয়েল, সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, জেট ফুয়েলের কেরোসিন টাইপের জেপি-১, জেপি-৪সহ অন্যান্য কেরোসিন; হালকা ডিজেল তেল, হাই স্পিড ডিজেল তেল এবং ফার্নেস তেল।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করলে আগাম কর প্রত্যাহারের কোনো সুফল ভোক্তারা পাবে না।  কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়, কিন্তু বিশ্ববাজারে কমলে দেশে আর কমানো হয় না। তিনি আরও বলেন, আগাম কর প্রত্যাহারের মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ সেই টাকা দিয়ে একটি ‘স্থিতিস্থাপক তহবিল’ গঠন করতে পারে। বিশ্ববাজারে যখন মূল্য বাড়বে তখন দেশের বাজারে দাম না বাড়িয়ে এই তহবিল থেকে সমন্বয় করতে পারবে।

জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকারের আগাম কর প্রত্যাহারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিন বলেন, সময়মতো দাম সমন্বয় করলে ভোক্তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে। চিনি ও সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা অনেকবার দেখেছি সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে দেশের বাজারে দাম কমিয়ে সমন্বয় করার আগেই বিশ্ববাজারে আবার দাম বেড়ে যায়। তবে সরকার নিজেই যখন আমদানিকারক এবং সরকারি কোম্পানিগুলোই জ্বালানি তেল বিতরণকারী, তখন সহজেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ভোক্তারাও এর সুফল পাবে। 


গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত আগাম আয়কর আগেই তুলে নেওয়া উচিত ছিল। এখানে কোনো ধরনের আগাম কর যুক্তিসঙ্গত নয়, কর্তৃপক্ষ জোর করে চাপান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-সহ কর বিশেষজ্ঞরা এটা পছন্দ করে না, কিন্তু এনবিআর পছন্দ করে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জ্বালানি তেলের ওপর শুধু থাকা উচিত ভ্যাট, আর কিছু থাকা উচিত না। আমাদের দেশে জ্বালানি আমদানি করতে হয়, ফলে এটা যৌক্তিকও নয়। ভ্যাট ছাড়া জ্বালানির মূল্য থেকে সব ধরনের কর প্রত্যাহার এবং জ্বালানি তেলের মূল্যকে বাজার-ভিত্তিক করে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা পেতে ন্যূনতম কর বাধ্যতামূলক করা হতে পারে আগামী বাজেটে। অর্থাৎ এই সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম এক থেকে দুই হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা যারা গ্রহণ করেন, তাদের আয় করমুক্ত আয়সীমার বেশি বলে ধরে নিয়েই নতুন এই ব্যবস্থা চালুর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা বার্ষিক তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ালে বিপুলসংখ্যক করদাতা করজাল থেকে বেরিয়ে যাবেন। এসব আয়কর রিটার্নদাতাকে করজালের মধ্যে রাখার লক্ষ্য থেকে সরকারি-বেসরকারি এসব সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।


এনবিআর সূত্র জানায়, ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবার মধ্যে রয়েছে- ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে, ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারধারী হতে হলে, ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হতে গেলে, কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে, অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে। কোনো করদাতা ন্যূনতম কর না দিলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সেবা দিতে পারবে না বলে জানা গেছে।


শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top