সেবা ডেস্ক : শেরপুরের সদর থানাধীন এলাকায় চাঞ্চল্যকর ইজিবাইক চালক হত্যার মূল হোতাসহ ৫ জনকে আটক করেছে র্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্প।
র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল শেরপুর সদর উপজেলার খুনুয়া চরপাড়া এলাকার মৃত নুর ইসলাম ওরফে হলু শেখের ছেলে ও ৬ সন্তানের জনক মো. উজ্জল মিয়া তার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ে ভাড়ায় যাত্রীবহনে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ২৯ এপ্রিল সকালে পার্শ্ববর্তী খুনুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেতে থেকে উজ্জ্বল মিয়ার লাশ পাওয়া যায় এবং ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুজন মিয়া বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িত আসামিদের শনাক্ত ও আটকের অভিযান চালায়। পরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ বিশ্লেষণ করে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামানের নেতৃত্বে এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এমএম সবুজ রানার উপস্থিতিতে র্যাবের একটি দল গত রবিবার (৭ মে) রাজধানী ঢাকার ধামরাই কলেজ রোড থেকে মো. শামীম মিয়াকে আটক করে।
মামলার এজাহার ও র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, বাদী মোঃ সুজন মিয়া (৩৪), পিতা-মৃত নুর ইসলাম @ হলু শেখ, সাং-খুনুয়া চরপাড়া (মধ্যপাড়া), থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর। নিহত উজ্জল মিয়া (৪২), পিতা-মৃত নুর ইসলাম @ হলু শেখ, সাং-খুনুয়া চরপাড়া (মধ্যপাড়া), থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর বাদীর সহোদর বড় ভাই একজন ইজিবাইক চালক।
সে তাহার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি নিজ গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামসহ শেরপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় চালাইয়া জীবিকা নির্বাহ করিয়া আসিতেছিলো।
গত ২৮/০৪/২০২৩ ইং তারিখ রাত্রি আনুমানিক ৮:০০ ঘটিকার সময় নিজ বাড়ী হতে তাহার ইজিবাইক নিয়ে ভাড়াচালানোর জন্য বাহির হয় এবং ২৯/০৪/২০২৩ ইং তারিখ রাত অনুমান ০১:০০ ঘটিকার সময় নিহত উজ্জল মিয়া (৪২) বাদীকে ফোনের মাধ্যমে জানায় যে, সে ঘুঘুরাকান্দি এলাকায় আছে।
তারপর থেকে নিহত উজ্জল মিয়া (৪২) বাড়ীতে না ফেরায় বাদীসহ বাড়ীর লোকজন তাহাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করিতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ঐদিনেই সকাল আনুমানিক ১০:৩০ ঘটিকায় বাদী ফোনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, শেরপুর থানাধীন খুনুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাইদুল মেম্বারের বসতবাড়ী হইতে আনুমানিক ৩০০ গজ দক্ষিন-পূর্ব দিকে জনৈক দোছ মাহমুদের আবাদী জমির কোনায় অজ্ঞাত লাশ উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায়, বাদীসহ গ্রামের লোকজন উজ্জল মিয়া (৪২) এর লাশ সনাক্ত করে।
তাৎক্ষণিকভাবে উজ্জল মিয়া (৪২)’কে শেরপুর সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এমতাবস্থায় মোঃ সুজন মিয়া (৩৪) শেরপুর সদর থানায় হাজির হইয়া বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করলে অফিসার-ইন-চার্জ, শেরপুর সদর থানার মামলা নং-৬৪, তারিখঃ ২৯/০৪/২০২৩ ইং, ধারা- ৩৭৯/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজু করেন।
উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর থেকে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর উক্ত ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করিয়া হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এর নেতৃত্বে এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এম এম সবুজ রানা এর উপস্থিতিতে র্যাবের একটি অভিযানিক দল ০৭/০৫/২০২৩ ইং তারিখ অনুমান ১৩:৪৫ ঘটিকায় ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন কলেজ রোড এলাকা হতে হত্যা মামলার প্রধান সন্দিগ্ধ মোঃ শামীম মিয়া (৩০), পিতা-মোঃ সুরুজ মিয়া, সাং রঘুনাথপুর, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর’কে আটক করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধৃত মোঃ শামীম মিয়া (৩০) নৃশংস হত্যা কান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ধৃত মোঃ শামীম মিয়া ইজিবাইক ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে ভীমগঞ্জ হতে দশআনি যাওয়ার জন্য ইজিবাইক ভাড়া করে। যাওয়ার পথে ইজিবাইক চালককে শেরপুর জেলার সদর থানাধীণ ভীমগঞ্জ বাজারের সাথে ব্রীজের নীচে ইলেক্ট্রিক তার দিয়ে গলায় পেচিয়ে হত্যা করে লাশ শেরপুর জেলার সদর থানাধীন খুনুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় ধান ক্ষেতের ভিতর ফেলে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ইজিবাইকটি বিক্রয় করার জন্য মোঃ আবুল হোসেন এর নিকট প্রদান করে এবং উক্ত হত্যা কান্ড ও ইজিবাইক ছিনতাই এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা জানায়। ধৃত মোঃ শামীম মিয়া (৪০) এর তথ্যের ভিত্তিতে শেরপুর জেলার সদর থানা এলাকা হতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি বিক্রয়ের সাথে জড়িত ২। মোঃ আবুল হোসেন (২৭), পিতা-মোঃ মোফাজ্জল হোসেন, সাং-দুসরা ছনকান্দা কালাম বাজার, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর ইং ০৭/০৫/২০২৩ তারিখ অনুমান ১৬:০০ ঘটিকায় ধৃত করে। ধৃত মোঃ আবুল হোসেন জানায় যে, ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি বিক্রয়ের জন্য তাহার ভায়রা ভাই মোঃ রুবেল হোসেন এর সহায়তায় মোঃ সুলতান মিয়ার বসতবাড়ীর ধানের গোলার ভিতর ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটির বিভিন্ন পার্টস ও যন্ত্রাংশ লুকিয়ে রাখে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে জামালপুর জেলার সদর থানাধীন কোচনধরা এলাকা হতে ইং ০৭/০৫/২০২৩ তারিখ ১৭:১০ ঘটিকার সময় ৩। মোঃ রুবেল হোসেন (৩৫), পিতা-মোঃ আজাহার আলী, সাং-জিগাতলা, থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুর এবং ৪। মোঃ সুলতান মিয়া (৪৫), পিতা-মৃত জিন্নত আলী, সাং-কোচনধরা, থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুরকে আটক করে। মোঃ রুবেল হোসেন ছিনতাইকৃত ব্যাটারী মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম এর নিকট একত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রর করেন।
জামালপুর জেলার সদর থানাধীন গোপালপুর বারুয়াখালী বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ইং ০৭/০৫/২০২৩ তারিখ অনুমান ১৮:২০ ঘটিকায় ৫। মোঃ মঞ্জুরুল হক (৩০), পিতা-আঃ করিম, সাং-হরিপুর, থানা-জামালপুর সদর, জেলা-জামালপুর এর দোকান হতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক এর ০৪ টি ব্যাটারী উদ্ধার ও আটক করা হয়।
উপরোক্ত সকল আসামীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
ধৃত আসামীদেরকে সূত্রোক্ত মামলা মোতাবেক শেরপুর সদর থানায় হস্থান্তর করা হয়েছে। এ ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।