শফিকুল ইসলাম : এসএসসি সমমান পরীক্ষার একটি কেন্দ্রের এক নং কক্ষে পরীক্ষার শুরুর ২৫ মিনিট পর পরীক্ষার্থীদের হাতে রচনা মূলক প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে খাতা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কক্ষ পরিদর্শক ও কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে।
রবিবার (৩০ এপ্রিল) রৌমারী উপজেলার শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা উঠে।
পরীক্ষা চলাকালে এবং শেষে কেন্দ্র সচিব এর নিকট ১ নং কক্ষের পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্র সচিব। পরীক্ষা শেষে উল্টো পরীক্ষার্থীদের দেড়ঘন্টা ভয়ভীতি ও জিম্মি করে রাখেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক পরীক্ষার্থী। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, কক্ষ পরিদর্শক ও কেন্দ্র সচিব। এ কেন্দ্রের চত্বরে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরাসহ অনেকই ভীর করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, রৌমারী সার্কেল উপস্থিত হয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
জানাগেছে, শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪শ ৬৫জন ছাত্র ও ছাত্রীরা এসএসসি সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে প্রথম দিনই ৯জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনের পরীক্ষা ছিল বাংলা প্রথমপত্র। এ কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শক ছিলেন মোট ৩২জন শিক্ষক। কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন।
এ কেন্দ্রের ১ নং কক্ষে ৩২জন ছাত্র ও ছাত্রী পরীক্ষায় অশগ্রহণ করেন। ওই কক্ষে মাওলানা ইদ্রিস আলী ও নবীন উদ্দিন কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। ইদ্রিস আলী দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধর্ম বিষয়ক সহকারি শিক্ষক। অপরজন নবীন উদ্দিন কুটিরচর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি শিক্ষক।
পরীক্ষার্থী মারিয়া জান্নাত, ফারজিনা খাতুন, আরিফা খাতুন, নিপা খাতুনসহ অনেকই অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষার খাতা নির্দিষ্ট সময়ে দিলেও রচনা মূলক প্রশ্নপত্র ২৫মিনিট পর সরবরাহ করা হয়। আমাদের ২৫মিনিটে প্রায় দুইটির মতো প্রশ্ন উত্তর দিতে পারতাম। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষার শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ে আগেই খাতা নেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে পরীক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সকলে অভিযোগের বিষয় কেন্দ্র সচিব স্যার ও কক্ষে দায়িত্বরত স্যারদের রচনা মূলক প্রশ্নপত্রের বিষয় দেওয়ার জন্য একাধিকবার বলেও তারা প্রশ্নপত্র দেননি। উল্টো আমাদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করে রাখেন। তাই আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।
অভিযোগ ব্যাপারে জানতে চাইলে ১ নং কক্ষের পরিদর্শক মাওলানা মো. ইদ্রিস আলী অস্বীকার করে বলেন, যথাসময়ে আমি খাতা ও পরীক্ষার রচনামূলক প্রশ্নপত্র দিয়েছি। এখন পরীক্ষার্থীরা হয়তো বা পাশ করতে পারবে না তাই মিথ্যাচার করছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শৌলমারী এমআর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্র সচিব উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন বলেন, ১ নং কক্ষের কোন পরীক্ষার্থী রচনা মূলক প্রশ্নপত্র পায়নি এ ধরণের অভিযোগ দেয়নি। কোন পরীক্ষার্থী বললে তা মিথ্যা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রশ্নপত্র দিতে ৬ মিনিটের মতো দেরি হয়েছিল তা সত্য। ২৫ মিনিট পর প্রশ্নপত্র দেয়ার বিষয় পরীক্ষার্থীরা বাড়িয়ে বলছে।
সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশসহ আমি নিজেই সকলকে শান্ত হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবি এম সারোয়ার রাব্বি জানান, বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অভিযোগকারী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার শেষে ওই কক্ষে অভিযোগ প্রসঙ্গ জানতে কিছুটা সময় লেগেছিল। তবে কোন পরীক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করা হয়নি। পরে পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়। সেই সঙ্গে কক্ষ পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ও নবীন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসার জন্য আমার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি ২৫ মিনিট না তবে ৫ মিনিটের বিষয় জেনেছি। ওই কেন্দ্রের ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।