শফিকুল ইসলাম : কুড়িগ্রামের রৌমারীতে গত কয়েক দিন থেকে শীতের তীব্র ঠান্ডায় জনসাধারনের স্বাভাবিক কাজকর্ম থমকে দাঁড়িয়েছে। অপর দিকে চরম হতাশায় দিন কাটছে মৌ চাষিদের। হিমালয় পর্বত থেকে ধেয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে উত্তরবঙ্গের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা বাসিদের। শীতের তীব্র ঠান্ডা ও মাঝে মধ্যে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির ফলে বিপাকে পড়েছে মৌ খামারিরা।
রবিবার সকালের দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কোনাচীপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৩৫ থেকে ৪০ জন খামারি জীবন জীবিকার তাগিদে এ অঞ্চলে আসেন মধু সগ্রহের কাজে। মরার উপর খরার তার উপর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় বিপাকে মৌ চাষিরা। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে একশত পঞ্চাশ বক্স মৌমাছি থেকে ১০ থেকে ১১ মন মধু সংগ্রহ করা যায়। গত মৌসুমে একশত পঞ্চাশ বক্সে ১৩ থেকে ১৫ মন মধু সংগ্রহ হয়েছে। ইতি পূর্বে প্রতিমন মধুর দাম ছিল প্রায় ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সিন্ডিকেটের কারনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে মধু।
মৌখামারী তালহা ইসলাম, আমিনুল, আশরাফ আলী, মোকরম আলী অভিযোগ করে বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এবার শীতের তীব্র ঠান্ডায় মৌমাছি ঠিক মতো মধু আহরণ করতে পারছে না। অপর দিকে মধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এর কারনে ন্যায দাম পাচ্ছি না। কোম্পানী ন্যায দাম দিলেও সিন্ডিকেট এর কারনে উপায় না পেয়ে কম দামে পাইকারীদের কাছে বিক্রয় করতে হয় মধু।
সিন্ডিকেটের সদস্য মো. মাসুদ সিন্ডিকেটের বিষয়টি অশিকার করে বলেন, আমরা ব্যাবসায়ী আমি মধুকিনে এবি কোম্পানি, একমি কম্পানি সহ বিভিন্ন কোম্পানিকে মধু দিয়ে থাকি। আফজাল হোসেন বাংলাদেশ থেকে ভারত, জাপান, সহ বিভিন্ন দেশে মধুপাঠায়। আমরা বাজার অনুযায়ী মৌ চাষিদের মুধু ক্রয় করতে কোন সিন্ডিকেট করা হয় না। তবে দরিদ্র মৌ চাষিদেরকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়। এই জন্য মধু ক্রয়ের সময় কিছু টাকা কম দেই।
সরাসরি ভারতে ইম্পুট কারি মো. আফজাল হোসেন এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে না।
উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম সিন্ডিকেটের বিষয় শিকার করে বলেন, নিদিষ্ট কোন মধু কেনার ব্যাপারী না থাকায় এবং যারা আছে তারা না এসে দালাল এর মাধ্যমে মধুকিনে স্টক রেখে তারা আবার বেশি দামে অন্য ব্যাপারীদের কাছে বিক্রয় করে দেয়। আর এই জন্য মৌচাষীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয়। সিন্ডিকেটের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উত্তরববঙ্গ মৌ’চাষি সমিতির উদ্যোগে একটা সেমিনার করেছিলাম সেখানে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের এমডি ছিলেন সেখানে চাষিদের সিন্ডিকেটের বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি চাষিদেরকে স্বল্প সুদে আগামিবছর ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি আগামী বছর থেকে মৌ চাষিদেরকে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধরী বলেন, এবার উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবার সরিষার গুনগত মান অনেক ভালো। তিনি আরও বলেন, রৌমারীতে অনেক মৌচাষি আসায় এখানকার ফলন প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহয়তা করে থাকে। তবে আশা করছি পরিবেশ অনূকুলে থাকলে সরিষার ফলন বাম্পার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।