সেবা ডেস্ক : শেরপুরে চাঞ্চল্যকর স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, জামালপুর ক্যাম্প।
র্যাব-১৪, জামালপুর ক্যাম্প কর্তৃক শেরপুরে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী |
র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ভিকটিম (১৫) একজন গরীব ঘরের সন্তান। ভিকটিমের মা (বাদী) যমুনা টেক্সটাইল মিলে অপারেটর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তার প্রেক্ষিতে ভিকটিম সপরিবারে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন রতনপুর সাকিনস্থ গ্রামের নুরুল বাশারের ভাড়াটিয়া বাড়ীতে বিগত ০৩ বছর যাবত বসবাস করে আসছিলেন। ভিকটিম (১৫) কালিয়াকৈর রতনপুর স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতেন।
প্রতি বছরের ন্যায় রোজার ঈদের ছুটি কাটানোর উদ্দেশে সপরিবারে গত ০৬/০৭/২০১৬ ইং তারিখে গ্রামের বাড়ীতে যান। ঈদের ছুটি শেষে ভিকটিমকে তার নানীর কাছে রেখে ভিকটিমের মা, ভাই ও বোনসহ গাজীপুর চলে যান।
ভিকটিমের মামা গত ২০/০৭/২০১৬ ইং তারিখে ভিকটিমের মাকে ফোন করে জানায় যে, গত ১৯/০৭/২০১৬ ইং তারিখ রাত ০৮:০০ ঘটিকা হতে ভিকটিমকে অনেক খোজাখুজি করেও পাওয়া যাচ্ছেনা।
উক্ত সংবাদ শুনে ভিকটিমের মা গ্রামের বাড়ীতে চলে আসেন এবং ভিকটিমের নানীর কাছ থেকে জানতে পারেন যে, মোঃ আমান উল্লাহ (২৩), পিতা- মৃত ফজল হক, সাং-বাকাকুড়া, থানা-ঝিনাইগাতি, জেলা-শেরপুর ভিকটিমের বাড়ীতে আসিয়া কথাবার্তা বলিত। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। ভিকটিম আসামী মোঃ আমান উল্লাহকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাহা প্রত্যাখ্যান করে ধর্ষণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
এমতাবস্থায় আসামী কালু মিয়া (৪০), পিতা-মৃত মজিবর রহমান, সাং-বাকাকুড়া, থানা-ঝিনাইগাতি, জেলা-শেরপুর ভিকটিমের সাথে কথা বলার উদ্দেশে বাড়ীতে এসে ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই ভিকটিম নিখোঁজ হয় এবং আসামী আমান উল্লাহ ও তার মা এবং কালু মিয়া পলাতক হয়।
ভিকটিমের মা বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে কোন সন্ধান না পেয়ে গত ২১/০৭/২০১৬ ইং তারিখ বেলা অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম মিস্টারকে বিষয়টি অবগত করেন। তার কিছুক্ষণ পর মেম্বারের কাছে জনৈক ফজল ফোন করে জানায় যে, জিয়ারখালে একটি লাশ পাওয়া গেছে।
এই সংবাদের প্রেক্ষিতে মেম্বার ও ভিকটিমের মা পশ্চিম বাকাকুড়া সাকিনে এতিমখানার পশ্চিম পাশে জিয়ারখালে পানিতে ভাসমান একজনের লাশ দেখতে পেয়ে পানি থেকে উপরে তুলে ভিকটিমের মা তার মেয়ের লাশ সনাক্ত করেন।
উক্ত লাশটি বীভৎস অবস্থায় দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ এসে ভিকটিমের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে এজাহার দাখিল করিলে অফিসার ইনচার্জ ঝিনাইগাতী থানায় মামলা নং ১৬/১০৫, তারিখঃ ২১/০৭/২০১৬ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দঃ বিঃ রুজু করেন।
তদন্তকারী অফিসার মামলার তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৪/৯(৩)/৩০ ধারায় অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন।
মামলার ঘটনার পর থেকেই আসামী কালু মিয়া আত্মগোপনে চলে যায়।
দীর্ঘ ০৭ বছর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় কালু মিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সামিউল ইসলাম নাম ধারন করে শ্রমিক এবং রাজমিস্ত্রী পেশায় নিয়োজিত ছিল।
পরবর্তীতে বিজ্ঞ বিচারক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, শেরপুর মহোদয় গত ১৮/১০/২০১৮ ইং তারিখে আসামী কালু মিয়া (৪০)’কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(৩) ধারার অপরাধে দোষী সাবস্থ করে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন।
পরবর্তীতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামীর অবস্থান নিশ্চিত করে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এম. এম. সবুজ রানা এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি অভিযানিক দল গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারী) সময় অনুমান ১৮:২০ ঘটিকায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন তাকুয়া গার্মেন্টস এর সামনে হতে আসামীকে আটক করে।
ধৃত আসামীকে ঝিনাইগাতী থানায় মামলা নং ১৬/১০৫, তারিখঃ ২১/০৭/২০১৬ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দঃ বিঃ মূলে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।